""

শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার তালিকা


আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের একটি লিস্ট রাখতে পারেন। শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার তালিকা তৈরি করার জন্য আমি কিছু সূচনা দিতে পারি। এই তালিকা শিশুর বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সরবরাহ করতে সাহায্য করবে। আপনি এই খাবারে তালিকা নিয়মিত অনুসরণ করে আপনার শিশু দৈনিক খাদ্যের প্রতি সঠিকভাবে নজর রাখতে পারবেন।
অর্কিড ফুল গাছের পটিং মিডিয়া এবং সম্পূর্ণ পরিচর্যা।

আর এরি সাথে বাচ্চার সলিড কবে থেকে শুরু করবেন? কি কি খাবার দিয়ে শুরু করবেন? এবং কতটুকু পরিমানে দিবেন? ৬ থেকে ৭ মাস বয়সী বাচ্চাদের কি কি ফল খাওয়াতে পারবেন কি কি সবজি খাওয়াতে পারবেন এবং কি কি শস্য দানা খাওয়াতে পারবেন। এছাড়া ৬ থেকে ৭ মাস বয়সী বাচ্চার জন্য পরু ৩০ দিনের খাবারের রেসিপি Step by step তালিকা পেয়ে যাবেন। এবং নতুন মায়েদের শিশুর সলিড শুরু করার ক্ষেত্রে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রিপসও থাকবে।

সূচিপত্রঃ

কখন থেকে বাচ্চাকে সলিড খাওয়ার দেয়া শুরু করবেন০১

শিশুর বয়স যখন ছয় মাস পূর্ণ হবে অর্থাৎ ১৮১ তম দিন থেকে শিশুকে সলিড খাবার খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে। তবে যে শিশুরা জন্মের পর থেকেই ফর্মুলা মিল খায় এবং যে শিশুরা ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই খাবার প্রতি আগ্রহ দেখায়। তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী 5 মাস বা সাড়ে পাঁচ মাস থেকে সলিড দেওয়া যেতে পারে। শিশুকে দিনে কতবার সলিড খাবার দেবেন?  ছয় মাসের বাচ্চার সলিড শুরু করার পর আগামী এক মাসের খাদ্য অভ্যাস আপনার শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ছয় মাস মায়েরা তার সন্তানকে বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়ায়েছেন। কোন সমস্যা হয়নি।বাচ্চাকে সলিড খাবার দেওয়ার সময় মেক্সিমাম মাই এই ভুলটা বেশি করে থাকেন। বাচ্চার ছয় মাস পূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের খাবার বেবিকে একসাথে খাওয়াতে থাকেন। এতে করে বেবির বদহজম হয়ে পাতলা পায়খানার মধ্যে সমস্যা হয়ে যায়। আর এতোটুকু বয়সী বাচ্চার পাতলা পায়খানা হলে তার ওপর কেমন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে সেটা আমরা কম বেশি সবাই জানি।
ছয় মাসের বাচ্চাকে এই পুরো একমাস এক বেলা করে বাড়তি খাবার দেবেন। ছয় মাসে বাচ্চাকে সাত মাস হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ পুরো একমাস ধরে সারাদিনে এক বেলা বাড়তি খাবার দিতে পারবেন। এবার জেনে নিন বাচ্চার প্রথম দিনের সলিড হিসেবে কি দিতে পারেন? শিশুর প্রথম খাবার হিসেবে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদেরা ঘরে তৈরি সেরেল্যাক বা সুজি দিতে বলে থাকেন। আর যে খাবারটাই খাওয়ানো হোক না কেন পর পর তিনদিন সেই একই খাবার খাওয়াতে বলে থাকেন। কারণ খাবারটি থেকে শিশুটির যদি কোন ধরনের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাহলে বুঝতে হবে এই খাবারটি শিশুর শরীরে শুট করছে না।

ছয় মাস থেকে ১ বছর বয়সী শিশুর খাবার০২

ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের কে মায়ের দুধের পাশাপাশি তিন বেলা অনান্য বারতি খাবারও দেওয়া প্রয়োজন। তবে এই সময়েও শিশুর প্রধান খাবার হবে তাঁর মায়ের দুধ। অর্থাৎ বারতি খাবারের পরিমাণটা হবে কম। ৩ বেলার মধ্যে ২ বেলা খিচুরি বা নরম ভাতের মত ভারী খাবার দেওয়া যেতে পারে। বাকি এক বেলা নরম কোনো খাবার যেমন- ফলের রস বা নরম ফল খাওয়াতে পারেন, যেমনঃ কলা। এছারাও সবজীর স্যুপ, আধা সিদ্ধ ডিম বা ছোট মুরগির স্যুপও এই সময় শিশুদের জন্য খুব উপকারি খাবার। একটি কথা মনে রাখবেন, পুষ্টিকর উপাদান যুক্ত খাবার বাইরে থেকে কিনে এনে শিশুকে খাওয়ানর থেকে বাড়িতে পুষ্টি উপাদান দিয়ে খাবার তৈরি করে খাওয়ানো উত্তম। শুধু শিশুদের ক্ষেত্রেই নয় বরং বড়দের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। শিশুর বয়স যখন ১ বছর পেরিয়ে যাবে তখন মায়ের দুধের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে। এই বয়সে শিশুদের বারতি খাবার প্রয়োজন দিনে পাঁচ বার। তবে মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই শিশুকে জোড় করে বেশি বেশি খাওয়াতে যাবেন না।

বাড়ন্ত শিশু কোনো একটি খাবার খেতে পছন্দ না করলে সেটির পরিবর্তে একই পুষ্টি মানের অন্য একটি খাবার দেওয়া যেতে পারে। যেমনঃ শিশু যদি খিচুরি খেতে পছন্দ না করে তাহলে তাকে নরম ভাতের সাথে ডাল, সবজি, মাছ, মাংস মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন। শিশু কে ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। ২ বছর বয়সের আগে গরুর দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে এই বয়সে শক্ত খাবার যেমন- শক্ত ভাত, বিস্কুট বা এ জাতীয় শক্ত খাবার দেওয়া ঠিক নয়। এই বয়সে শিশুকে শক্ত খাবার দেওয়ার ফলে খাবার গলায় আটকে যেতে পারে।
প্রথমের দিকে স্যুপের বাটির ৩ ভাগের এক ভাগ দিয়ে ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ আধা বাটি, পৌনে এক বাটি এবং এভাবে এক বাটিতে আনতে হবে। 

এছাড়াও, এসময়ে শিশুর জন্য উদ্ভিজ্জ আমিষ খাবার খুব বেশি উপযোগী। তাই শিশুর খাবারে মাছ বা মাংস যোগ করার আগে দাল যোগ করুন। শিশুর খিচুরি তৈরির সময় চাল ও ডাল সমপরিমাণ নেওয়া উচিত। আবার ছয় মাস বয়সী শিশুদের কে ডিমের কুসুম দেওয়া যায়। এরপর আস্তে আস্তে ডিমের কুসুমের পরিমাণটা বাড়িয়ে দিবেন। 

শিশুকে অ্যালার্জি জাতীয় খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো একটি খাবার শিশুকে টানা ৩ থেকে ৫ দিন দিলেই বুঝতে পারবেন যে, ঐ খাবারটি তে আপনার শিশুর অ্যালার্জি আছে কি না। যদি কোনো খাবারে শিশুর অ্যালার্জি থাকে তাহলে তা ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই ধরা দিবে। অ্যালার্জি ধরা দেওয়ার সাথে সাথে ঐ খাবারটি বন্ধ করে দিন। শিশুর বয়স ৯ মাস না হওয়া পর্যন্ত শিশুকে টক জাতীয় কোনো খাবার দিবেন না। তবে মিষ্টি‌ জাতীয় খাবার আবার শিশুদের জন্য বেশ উপযোগী। তবে চিনির পরিবর্তে মধু বা গুড় ব্যবহার করা ভালো। শিশুদের খাবারে বেশি লবণ দেওয়া ঠিক নয়।

পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর খাবারঃ০৩

সাধারণত ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের কে খাবার খাওয়াতে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। কারণ এই বয়সে শিশুরা কথা বলতে শিখে যায়।

শিশুরা এই বয়সে তাদের খাবার বাদেও অনান্য বিষয়েও তাদের পছন্দের অপছন্দের মতামত প্রকাশ করতে পারে। কোন খাবার তাঁর পছন্দ, কোন খাবার অপছন্দ, কোন খাবার সে খেতে পারছে, পেট ভরলো কি না এইসব যাবতীয় বিষয় তারা বলতে পারে। তাই অভিভাবকদের এই বয়সী শিশুদের খাবারে শুধু পুষ্টিগুণ ও পরিমাণের দিকে নজর রাখলেই হয়।
এই বয়সে শিশুদের খেলাধুলা ও বন্ধুদের সাথে ঘুরাফেরার জন্য তাদের ক্যালোরির বেশি প্রয়োজন হয়। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের খাবারে সব থেকে বেশি প্রয়োজন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট।

কার্বোহাইড্রেটঃ
ভাত, রুটি, নুডলস, আলু জাতীয় খাবারে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকলেই কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ হবে।

প্রোটিনঃ
অনেক শিশু আবার এই বয়সে প্রোটিনের অভাবে ভোগে। প্রোটিনের চাহিদা সঠিক ভাবে পূরণ করতে পারলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হয়, শিশু লম্বা হয়, সাস্থ সুস্থ ও সুন্দর হয়। তাই এই বয়সে শিশুর প্রয়োজনীয় প্রোটিন সঠিক ভাবে পূরণ করা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মাছ, মাংস, সয়াবিন, বিভিন্ন ডাল বা দানা জাতীয় খাবার ও শাঁক সবজী থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান পাওয়া যায়। তাই প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এ জাতীয় খাবার প্রতিদিন আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

ক্যালরিঃ
শিশু যদি বেশি চঞ্চল হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তার ক্ষুধার পরিমাণ বেশি হতে পারে। সেজন্য বাড়তি ক্যালরি জোগাতে প্রতিদিন একটি ডিম সিদ্ধ করে খাওয়াতে পারেন। তবে শিশুর হজম শক্তি যদি ভালো হয় তাহলে প্রতিদিন দুইটি করে সিদ্ধ ডিম খাওয়াতে পারেন।

ফ্যাটঃ
পাঁচ বছরের আগ পর্যন্ত শিশুদের একটু বেশিই ফ্যাটের প্রয়োজন থাকে। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলে বেশি ফ্যাটের প্রয়োজন হয় না। সামান্য ফ্যাটের চাহিদা পূরন হলেই হয়। এই ফ্যাটের চাহিদা পূরণের জন্য শিশুর খাবারে ঘী, মাখন, তেল করতে হবে। শিশুর খাবার রান্নার সময় অলিভ অয়েল বা জলপাই তৈল ব্যবহার করতে পারেন।

ক্যালসিয়ামঃ
শিশুর প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়াতে হবে। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগেই  বা রাতে ঘুমানোর চগে শিশুকে এক গ্লাস দুধ খাওয়াতে পারেন। এতে শিশুর দ্রুত বিকাশ ঘটবে।

আয়রনঃ
শিশুর মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির বদলে আঁখের গুড় বা মধু ব্যবহার করতে পারেন। গুড়ে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন আছে। শিশুর ক্লান্তিবোধ বা দ্রুত কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার মত সমস্যা সাধারণত আয়রন এর অভাবে হয়ে থাকে। তাই শিশুর মিষ্টি খাবার তৈরির সময় আঁখের গুড় ব্যবহার করতে পারেন। শিশুর খাবারে বেশি লবন, বেশি চিনি, বেশি তৈল দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
আরো পড়ুনঃ 
এই বয়সী শিশুদের প্রতিদিন এক বা দুইটি মৌসুমি ফল খেতে দিতে হবে। মৌসুমি ফলমূলে মৌসুমি রোগ ব্যাধীর প্রতিকার পাওয়া যায়। যেমনঃ পেয়ারা, আপেল, কমলা, পেঁপে, কলা বেশি করে খাওয়াতে পারেন।

এই বয়সী শিশুরা সাধারণত বাইরের খাবার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়। তবে যতটা সম্ভব বাইরের খাবার খাওয়ানে থেকে বিরত থাকুন। কারণ আমরা সকলেই জানি যে বাইরের খাবার আসলে কতটা সাস্থকর হয়ে থাকে। তাই শিশুর সাস্থ ভালো রাখতে শিশুকে বাইরের খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

সকাল, দুপুর ও রাত এই ৩ বেলা মূল খাবার সঠিক ভাবে খেতে দিন। এর বাইরে সকাল ও দুপুরের আগে একবার এবং দুপুর ও রাতের মাঝ খানে একবার নাশতা খেতে দিন। এক্ষেত্রে নুডলস, পায়েস, পিঠা, খিচুড়ি, সবজী, ঘড়ে তৈরি কেক ও পিতজা খাওয়াতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url