হাম ভাইরাস জনিত একটি রোগ যা জার্মান মিজেল্স নামে পরিচিত। এটি কোন সাধারণ
রোগ নয়, তাই একে অবহেলা করা যাবে না। হামের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া,
অপুষ্টিসহ নানারকম জটিলতা হতে পারে। সারা বছর পৃথিবীতে প্রায় এক কোটি মানুষ হামে
আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যেও নানা রকম জটিলতার কারণে দুই লাখের মৃত্যু ঘটে থাকে।
হামের কারণে পাঁচ বছর কম বয়সী শিশুরাই বেশি মৃত্যুবরণ করে। ইদানিং হাম শুধু
শিশুদের নয় বড়দেরও আক্রমণ করছে। এজন্য আমাদের হাম প্রতিরোধে আরও সচেতন হতে হবে।
তো এই আর্টিকেলে হাম রোগ সংক্রান্ত যে সমস্ত বিষয়ে রয়েছে-
- হাম জ্বরের লক্ষণ
- কিভাবে আক্রান্ত হয়?
- হাম হলে কি করবেন? ( হামের চিকিৎসা ও ঔষধ )
- হামের চিকিৎসা না হলে কি হবে?
- হাম রোগের খাবার
- হাম হলে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা
- হাম এর প্রতিরোধ কি?
সূচিপত্রঃ
হাম জ্বরের লক্ষণঃ-
হাম হলে প্রচন্ড জ্বর হয়। জ্বরের সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা চোখ নাক দিয়ে পানি ঝরা
কাশি মাথা ব্যথা কানে ব্যথা ইত্যাদি নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়। জ্বর শুরু হওয়ার
তিন থেকে পাঁচ দিনের মাথায় শরীরের গুড়ি গুড়ি দানা উঠে। দেখতে অনেকটা ঘামাচির
মত।
প্রথম দিকে চুলের রেখা বরাবর ও কানের পিছনে আর ঘাড়ে তারপর মুখে ও গলায় এবং
সেখান থেকে নিচে নামতে নামতে শেষে হাতে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। শরীরে তখন প্রচুর
চুলকায়। হামে লাল দানা ওটা চারদিন আগ থেকে শুরু করে পরবর্তী চারদিন পর্যন্ত
রোগীর শরীর থেকে হামের জীবাণু অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। এ সময়ে আলতোভাবে
শরীরের কোথাও চামড়া পেঁয়াজের ছিলকার মত খসে যায়।
কিভাবে আক্রান্ত হয়ঃ-
সাধারণত আক্রান্ত রোগের হাচিঁ-খাসির মাধ্যমে এর ভাইরাস আশপাশের সুস্থ মানুষের
শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির কক্ষে প্রবেশ করলেও সুস্থ যে কেউ হামের
জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। হামের র্যাশ ওঠার তিন দিন আগে এবং
র্যাশ দেখা দেওয়ার ৬ দিন পর পর্যন্ত মূলত হাম ছড়ায়। এ সময়ে কোন শিশু হামে
আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি আসলে কারণ হাম হতে পারে। তবে কাছাকাছি যে আসতে
হবে, তাও নয়। কারণ হাম হয়েছে এমন ব্যক্তি কোন স্থান ছেড়ে চলে গেলেও বাতাসে
হামের জীবাণু প্রায় এক ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।
হাম হলে কি করবেন? ( হামের চিকিৎসা ও ঔষধ )
হামের বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই। রোগীকে বিশ্রাম নিতে দিতে হবে। অবহেলা করা যাবে
না, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা ৭ থেকে ১০
দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। হামে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। আর
একটু পরপর ভেজা তোয়ালে বা গামছা বা নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। জ্বর
কমানোর জন্য প্যারাসিটামল এবং গায়ে চুলকানির জন্য
এন্টিহিস্টামিন দেয়া যেতে পারে। শিশুদের জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল (২ লক্ষ
ইউনিট ) বিষাদ গ্রস্থতা কমায়।
আরো পড়ুনঃ কোরআন থেকে শিশুদের নাম র দিয়ে। ৫০ টি নাম অর্থসহ
হামের চিকিৎসা না হলে কি হবে?
সময় মত চিকিৎসা করালো না হলে হাম থেকে নিউমোনিয়া কানে ইনফেকশন এমনকি
মস্তিষ্কে ম্যালিডাইসিস রোগ হতে পারে। তাই হামের নিরাপদ চিকিৎসা করানো খুবই
জরুরী।
কি খাবেন আর কি খাবেন না
এজাতীয় রোগে অনেকে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, খাওয়া বন্ধ করে দেন। শিশুদের বুকের
দুধও দেওয়া হয় না। যারা লোকমুখে এ ধরনের শোনা উপদেশ মানেন, তারা
প্রকৃতপক্ষে ভুল করেন। এতে শরীর দুর্বল হয়ে অপুষ্টি ও রোগের যৌথ আক্রমণে আরো
অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যু হয়। এসব রোগের খাবার দাবার পরিবর্তনের কোন
দরকার নেই। তখন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার বেশি করে দেওয়া
উচিত। কোন খাবারে প্রতি এলার্জি থাকলে সেটি এড়িয়ে চলাই ভালো। এসব রোগের
সাধারণত সব খাবার খাওয়া যায়। এ সময় শিশু যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার খায়
এবং কোনভাবে যেন শরীরে পানি শূন্যতা না দেখা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তবে অনেক অনেক সময় রোগীর ব্যাপ্তি খাদ্যনালীর অভ্যন্তরেও ছড়িয়ে যায়। এতে
শক্ত খাবারে পেটে ব্যথা অনুভূত হয়। এজন্য নরম কিংবা তরল খাবার খেতে বলা হয়।
এই নরম ও তরল খাবার যে কোন খাদ্য উপাদান দিয়ে তৈরি হতে পারে।
হামের প্রতিরোধ কিঃ
ঘরের কোন শিশুর যদি হাম হয়ে থাকে এবং অন্যান্য শিশুদের হামের টিকা দেয়া না
থাকে তবে তাদেরকে হামের টিকা দিতে হবে। শিশুর ৯ মাস পূর্ণ হয়ে ১০ মাসে পড়লেই
হামের টিকা দিয়ে দিতে হয়।
এই পোস্টটির দ্বারা আপনার যদি উপকার হয়ে থাকে তাহলে একটি কমেন্ট করে যাবেন।
সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, আসসালামু আলাইকুম।
ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url