""

চুল পড়া বন্ধ করার প্যাক। চুল পড়া বন্ধ করার কার্যকারী ৫ টি উপায়

 দিন দিন চুল পড়ে যাচ্ছে। করণীয় কি অনেকের মনেই এই প্রশ্ন থাকে বা চুল পড়া নিয়ে অনেকেই দিন দিন অনেক চিন্তায় পড়ে যায়। মূলত আপনাকে  চিন্তা মুক্ত করার জন্যই আজকের এই পোস্টটি তে আলোচনা করা হবে।

 

চুল পড়া বন্ধ করার প্যাক। চুল পড়া বন্ধ করার কার্যকারী ৫ টি উপায়

পোস্টসূচীপত্রঃএই পোস্টটিতে চুল ঘন, কালো এবং মজবুত করতে সাহায্য করে এমন ১০ টি খাবারের কথা বলবো। তারপর বলবো কোন তেল ও ভিটামিন ট্যাবলেট নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চুল পড়া বন্ধে করার ৫ টি উপায় আমরা জানবো। শেষে থাকছে চুলের যন্ত নিয়ার সঠিক উপায় ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ । 

সূচিপত্রঃ

চুলের যত্নে ১০ টি খাবারঃ

  • বাদাম।
  • হলুদ আর কমলা রঙের সবজি এবং ফলমূল।
  • তৈলাক্ত মাছ।
  • ডিম।
  • পালং শাক।
  • ডাল।
  • বিভিন্ন ধরনের বীজ।
  • ছোলা।
  • টক দই।
  • টক ফল।

  1. বাদাম। যেমন- চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, ওয়ালনাট। এগুলোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিশেষ করে ওমেগা-6 ফ্যাট। যা চুলের গড়া সতেজ রাখে এবং চুল লম্বা করতে সাহায্য করে। এই ওমেগা-6 ফ্যাট আমাদের শরীর নিজের থেকে তৈরি করতে পারে না খাবার থেকে নিতে হয়। এটার অভাবে চুল পড়ে যায় চুলের রং হাল্কা হয়ে যায়। তাই প্রতিদিনের নাস্তায় কিছু বাদাম রাখতে পারেন। তবে অনেক পরিমানে খাবেন না তাহলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  2. হলুদ আর কমলা রঙের সবজি এবং ফলমূল। যেমন- মিষ্টি আলু, গজর, পেপেে, আম, মিষ্টি কুমড়া এগুলো ভিটামিন - এ ,তে ভরপুর। চুরের ফলিকল অর্থাৎ চুলের গোড়া যেখান থেকে চুলটা বড় হয়। সেইটা ঠিকমত কাজ করার জন্য প্রয়োজন ভিটামিন-এ। আর সেটার খুব ভালো উৎস হলো এই হলুদ আর কমলা রঙের সবজি ও ফলমূল। দিনে যতখানি ভিটামিন-এ দরকার আধা কাপ গাজরে তার অর্ধেকের বেশি হয়ে যায়। তাই দিনে কিছু হলুদ ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  3. তৈলাক্ত মাছ। প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে ওমেগা-3 ফ্যাটের জন্য সামুদ্রিক মাছই খেতে হবে। যেমন- টুনা, স্যামন। তবে আমাদের দেশি মাছ যেমন- ইলিস, কই, মলা, চাপিলা এগুলোতেও ওমেগা-3 ফ্যাট আছে। এগুলো চুল ঘন কালো করতে সাহায্য করে, সাথে প্রটিনেরও ভালো উৎস।
  4. ডিম। সুন্দর চুলের জন্য ডিম আপনার খুব ভালো বন্ধু। কারন আমাদের চুল শর্করা বা ফ্যাটের তৈরি না। চুল প্রায় পুরটাই প্রোটিনের তৈরি। আর আমরা গবেষনা থেকে নিশ্চিত জানি যে, খাবারে প্রোটিনের অভাব হলে চুল পরে যায়। কিন্তু আমাদের অনেকের খাবারে যথেষ্ট পরিমান প্রোটিন থাকে না। কারন আমরা সাধারনত ভাতটাই বেশি খাই। তাই সুন্দর চুলের জন্য খাবারের তালিকায় ডিম রাখবেন। সাথে ডিমের আরো কিছু বনাস আছে। যেমন- বায়োটিন,সেলেনিয়াম,ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি। এগুলো চুল ঘন কালো আর সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
  5. পালং শাক। চুলের উপকারে পালং শাক একটি চমৎকার খাবার। এতে চারটা গুরত্বপূর্ণ জিনিস আছে যা চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়। ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, আয়রন, ফলেট। এই সব গুলোয় ঘন কালো সুন্দর চুলের প্রয়োজন।
  6. ডাল। সুন্দর চুলের জন্য ডাল খুব উপকারি। ডালে প্রোটিন আছে, ভালো পরিমানে আয়রন আছে। আয়রন আমাদের মাথার তালুতে রক্ত সরবরাহ করে, চুলের গোড়াই অক্সিজেন  পৈাছাতে সাহায্য করে। আমরা গবেষণা থেকে নিশ্চিত জানি যে আয়রনের অভাবে চুল পরে। সুন্দর চুলের জন্য ডালে আরো কিছু বোনাস আছে যেমন- জিঙ্ক, ফলেট। খুব পাতলা ডাল না খেয়ে ঘন করে রান্না ডাল খেলে এই পুষ্টি উপাদান গুলো বেশি করে পাবেন।
  7. বিভিন্ন ধরনের বীজ। যেমন- চিয়া সিডস, মিষ্টিকুমরার বিচি,সূর্যমুখির বিচি,তিসির বীজ। এগুলোতে সুন্দর চুলের জন্য অনেকগুলো চমৎকার উপাদান আছে। যেমন- চিয়া সিডসে আছে পচুর পরিমানে আলফা-লিনোলিনিক এসিড এক প্রকারের ওমেগা-3 ফ্যাট। মিষ্টিকুমড়ার বিচিতে আছে জিঙ্ক, সূর্যমুখি বিচিতে আছে বায়োটিন, তিসির  বীজে আছে সেলেনিয়াম। গবেষণায় চুল পরার সাথে এগুলোর অভাবের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। সিডস কিভাবে খেতে পারেন? ভাত খাওয়ার সময় তরকারির উপরে একটু ছিটিয়ে দিতে পারেন। রাতে টক দই, অল্প দুধের সাথে চিয়া সিডস মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। সকালে কিছু ফলের সাথে খেয়ে নিলেন।
  8. ছোলা। ছোলায় চুলের জন্য তিনটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে। আয়রন, জিঙ্ক এবং প্রোটিন। এই তিনটার যে কোনটার অভাবে চুল পড়তে পারে। তাই চুল সুন্দর করতে মাঝে মাঝে খাবারের ছোলা রাখতে পারেন।
  9. টক দই। এটা প্রোটিনের আরেকটা উৎস। সাথে চুলের জন্য উপকারী আরো কিছু উপাদান আছে যেমন জিঙ্ক। প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস ভালো খাবার।
  10. টক ফল। যেমন- কমলার, মাল্টা, লেবু, কিউয়ি ফল এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- সি আছে। সুন্দর চুলের জন্য ভিটামিন সি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি এর অভাবে চুল এমন বেঁকিয়ে-পেঁচিয়ে যায়। মেডিকেলের ভাষায় এটাকে বলে corkscrew hair l'. আবার ভিটামিন- সি এর অভাব হলে শরীর আয়রন শোষণ করতে পারে না। ফলে চুল পড়ে যায়। শরীর নিজে থেকে ভিটামিন- সি বানাতে পারে না। তবে টক জাতীয় ফল খেলে সেখান থেকে নিয়ে নিতে পারে। যেমন একটা কমলা থেকেই দিনের প্রায় ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। যারা টক একটু কম খেতে পারেন তাদের জন্য টমেটো, পেয়ারা এই ফলগুলো ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হতে পারে।
এই দশ প্রকারের খাবার ভেতর থেকে চুলে গুষ্টি দেবে। এখন বলবো বাইরে থেকে পুষ্টি দেওয়ার জন্য কি ব্যবহার করতে পারেন।

তেল ও ভিটামিন ট্যাবলেটঃ

পাম্পকিন সিড অয়েল বা কদুর তেল। চুল পড়ে যাচ্ছে এমন রোগীদের ওপর করা একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই তেলটা তিন মাস ব্যবহার করার পরে তাদের নতুন করে চুল গজিয়েছে। আর চুল আগের থেকে মোটা হয়েছে। তাই কদুর তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আপনারা দেখে শুনে ভালো কোম্পানির কদুর তেল ব্যবহার করবেন তাতে চুল পড়া ঠেকাতে সাহায্য হতে পারে।

এখন আসি চুল পড়া ঠেকাতে কোন ভিটামিন ট্যাবলেট কার্যকর। বাজারে অনেক ধরনের ভিটামিন ট্যাবলেট বিক্রি হয়, অনেক চমকপ্রদ কথাবার্তা থাকে সেগুলোতে। তবে এর বেশিরভাগেরি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অযথা টাকার অপচয়। চুলের জন্য বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদান আলাদা ট্যা বেড়েছে স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আসলেই ভালো। তবে একটা ব্যতিক্রম আছে, সেটা হলো ভিটামিন- ডি। খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন- ডি পাওয়া খুব কঠিন। ভিটামিন- ডি পাওয়ার সহজ উপায় হল রোদের সময় কাটানো। কিন্তু যাদের পক্ষে এটা সম্ভব না, তারা আলাদা করে ভিটামিন- ডি ট্যাবলেট খেতে পারেন। ভিটামিন ট্যাবলেট এর ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন। কারন অতিরিক্ত ট্যাবলেট নিলেও চুল পড়তে পারে। যেমন অতিরিক্ত ভিটামিন- এ ট্যাবলেট এর ফলে চুল পড়ে যায়। কিন্তু আপনি হলুদ রঙের সবজি খেয়ে শরীরের যতই ভিটামিন- এ ঢুকান না কেন, তাতে ক্ষতি নাই।

কন্ডিশনার ও চুল শুকানোঃ

এখন বলব চুলের যত্নে কমন কিছু ভুল নিয়ে।
১. অনেকে শ্যাম্পু ব্যবহারের পরে কন্ডিশনের ব্যবহার করেন না। এটা চুলের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, আমাদের চুল ভালো থাকার জন্য কিছু তেল দরকার হয়, যা মাথার তালু থেকে এমনিতে আসে। কিন্তু আমরা যখন শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুই, তখন সেই তেলটাও ধুয়ে চলে যায়। কন্ডিশনার এর কাজ হচ্ছে তেলগুলো আবার তুলে ফেরত দেওয়া। তাই প্রতিবার শ্যাম্পু করার পরে চুলে কন্ডিশনাল লাগাবেন।
২. ভেজা চুল ঘষে ঘষে মুছবেন না। আমরা অনেকেই গোসল করে তোয়ালে দিয়ে একদম ঘষে ঘষে চুল মুছি। এতে চুল নষ্ট হয়, এমন না করে তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে দিয়ে পানি বের করবেন।
৩. ভেজা চুল আঁচরাবেন না এতে চুল নষ্ট হয়। চুল খুব কোঁকড়া না হলে, একটু শুকিয়ে যাওয়ার পর চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন।
৪. ব্লো ড্রাইয়ার বা কার্লিং আয়রন দিয়ে চুল শুকাবেন না। চুল বাতাসে শুকিয়ে নেয়ার সবচেয়ে ভালো। তবে যদি ব্লো ড্রাইয়ার বা কার্লিং আয়রন ব্যবহার করতে হয়, তাহলে সবচেয়ে কম হিটে ব্যবহার করবেন, যত অল্প সময় ধরে করা যায়। সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার না করার চেষ্টা করবেন।
৫. খুব টাইট করে চুল বাঁধবেন না। যারা খুব টাইট করে চুল বেঁধে রাখেন, সেই টানের কারণে চুল পড়তে পারে। এটাকে বলে ট্র‌্যাকশন এলোপেশিয়া।

চুল পড়া বন্ধ করার সহজ পাঁচটি উপায়ঃ

  • রাতে ঘুমানোর আগে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত নারিকেল তেল মাসাজ করুন। সকালের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • অ্যালোভেরা জেল ব্যান্ড করে এক ঘন্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল পড়া কমানো এবং মাথার ত্বকের চুলকানি দূর করবে।
  • ডিমের কুসুমের সঙ্গে সামান্য অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে এক ঘন্টা লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে।
  • অলিভ অয়েল চুলে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
  • পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

চুল পড়ার চিকিৎসাঃ

কিছু রোগের কারণে চুল পড়তে পারে। যেমন থাইরয়েডের রোগ, রক্তশূন্যতা। আপনার যদি খাবার দাবার ঠিক থাকে, চুলের যত্ন নেন ঠিকমতো তাও অনেক চুল পড়ে, তাহলে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। তিনি খতিয়ে দেখতে পারবেন কোন রোগের কারণে এমন হচ্ছে কিনা। রোগ ধরা পড়লে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করা যাবে। চুল পড়তে থাকার একটা অন্যতম কারণ হলো Androgenetic Alopecia রোগ। এই রোগে ছেলেদের মাথায় সাধারণত টাক পড়া শুরু করে। অথবা কপালে দুই পাশ থেকে চুল টাক হতে পারে। মেয়েদের সাধারণত টাকা হয় না, কিন্তু চুল পাতলা হয়ে যায়, মাথার সিঁথি বড় হয়ে যায়। এই দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসা আছে। দুইটা ওষুধ খুব ভালো কাজ করে। ওষুধগুলোর নাম হচ্ছে মিনক্সিডিল আর ফিনাস্টেরাইড। চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তিনি দেখতে পারবেন আপনার এই রোগটা হয়েছে কিনা এবং কোন ওষুধের ভালো হতে পারে। ওষুধ ছাড়াও আরো কিছু উন্নত চিকিৎসা দেশে হচ্ছে যেমন ট্রান্সপ্লান্ট অর্থাৎ মাথার পিছন থেকে চুল এনে সামনে বসানো। তারপর পিআরপি থেরাপি তেও কেউ কেউ উপকার পাচ্ছেন। অর্থাৎ চুল পড়ার অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে, একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা স্কিনের ডাক্তারের কাছে গেলে তারা চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url