dragon fruit এর উপকারিতা । ড্রাগন ফল চাষ
ড্রাগন ফল ( Dragon Fruit ) একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল, যা সাম্প্রতিক সময়ে
বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি একটি সুন্দর ফল,যা স্বাদযুক্ত এবং পুষ্টি
সমূদ্ধ। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের নাম শুনলেই কেমন জানি
অদ্ভুত মনে হয়। এ আবার কেমন ফল এটা কি আদৌ খাবার উপযোগী কিনা মনে সন্দেহ
জাগে? কিন্তু এই ফল আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, এই ফল চাষ করে
অনেকে কোটিপতি হচ্ছে। চীনের লোকেরা একে ফ্যাট ড্রাগন ফুট এবং ড্রাগন
পাওয়ার ফুট বলে। ভিয়েতনামে সুইট ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াতে
ড্রাগন ফ্রুট নামে পরিচিত। অন্যান্য দেশের দেশীয় নাম হল স্ট্রবেরী নাশপাতি।
ড্রাগন গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো, এই গাছ ১. ৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হয়।
গাছ থেকে এটিকে অনেকেই ইরো সবুজ ক্যাকটাস বলে মনে করেন। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল
গোলাপী রঙের এই ফলে এসে আর লোকজনের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এটা খেতে হালকা মিষ্টি
মিষ্টি এই ফলের খোসা নরম, এটা কাটলে ভিতরটা দেখতে লাল বা সাদা রংয়ের হয়ে থাকে
এবং ফলের মধ্যে ছোট ছোট কালোজিরার মত নরম বিজ থাকে। এবং মিষ্টি গন্ধযুক্ত এই ফল
খেতে অনেক সুস্বাদু।
ড্রাগন ফল দেখতে অনেক সুন্দর এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয়, পাতাবিহীন এই ফলটি দেখতে ডিম্বাকার এবং উজ্জ্বল গোলাপী বা লাল রঙের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ফলের বাহিরে খোসা দেখতে রুপকথার ড্রাগনের মতো। এই রূপকথার ড্রাগনের সাথে কিছুটা মিল থাকার জন্য এটিকে ড্রাগন ফল বলে। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ
- পুষ্টিগুণের পাওয়ার হাউজ
- দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে
- প্রচুর ফাইবার থাকে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- হজম শক্তি বৃদ্ধি
- ক্যান্সার প্রতিরোধে
- চুলের জন্য ড্রাগন ফল
- ত্বকের সৌন্দর্যের ড্রাগন ফল
- ডাইবেটিস
- হাঁপানি
- ওজন কমাতে
পুষ্টিগুণের পাওয়ার হাউজঃ
দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেঃ
প্রচুর ফাইবার থাকেঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ
প্রতিদিনের জীবনের সুস্থ থাকতে হলে হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখা খুবই প্রয়োজন। হজম
প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে ড্রাগন ফল সেবন করুন। ড্রাগন ফলে উপস্থিত ফাইবার খাদ্য হজম
করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে দেয় না। কোষ্ঠকাঠিন্যতে মন
খুবই শক্ত হয়ে যায়। ড্রাগন ফলে জলের মাত্রা প্রচুর হওয়ায় এই ফল ব্যক্তিকে
হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়াও শরীরের বিপাকীয়
ব্যবস্থা এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ক্যালসিয়াম ফসফরাস এবং ভিটামিন বি-
টু পাওয়া যায়। এই ফলে এমন উপাদান থাকে যা শরীরের বিষাক্ত টক্সিন পদার্থ গুলি
অপসারণ এর সহায়তা করে যার ফলে এই ফল সেবন করলে শরীরে ক্যান্সার রোগ জন্মাতেই
পারে না।
চুলের জন্য ড্রাগন ফলঃ
ড্রাগন ফল চুল ঝরে পড়া কমায় এতে এমন পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের চুলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, সাথে সাথে চুলের ডগা মজবুত বাড়াতে সাহায্য করে। কিভাবে চুলে ড্রাগন ফল ব্যবহ্যার করবেন? চুলে ড্রাগন ফল ব্যবহ্র করার জন্য কি করতে হবে দেখে নিন, ঘোরুয়া পদ্ধতি।
একটি ড্রাগন ফল নিতে হবে। এই ফলের রস একটি বাটিতে ছেকে নিতে হবে। ড্রাগন ফলের রস চুল ঝরে পরা কমায়। এতে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে,যা আমাদের চুলের সুন্দর্য বৃদ্ধি করে সাথে সাথে চুলের ডগা মজবুত বানাতে সাহায্য করে। এখন একটি পাত্রে তিন চামস চা পাতা দিয়ে পানি গরম করে নিতে হবে। চায়ের লিকারে চুলের খুশকি দূর হবে ও চুল উজ্জল হবে। ছাকনির সাহায্য চায়ের লিকার ছেকে নিয়ে একটি পাত্রে নিতে হবে। এর সাথে ড্রাগন ফলের ছেকে রাখা রস মিশিয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে চার চামস কফি মিশিয়ে নিতে পারেন এতে করে আপনার চুল উজ্জল হবে এবং সুন্দর একটা কালার আসবে। এই সব কিছুর মিশ্রনকে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে এরপর চুলায় কিছিক্ষণ জাল করে নিতে হবে। ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ঠান্ডা করেনিতে হবে ঠান্ডা হয়ে গেলে এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে।
এটি চুলের ফলিকলগুলিকে উদ্দীপিত করে। যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুল পরা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। খুশকি দূর করে লেবুতে প্রাকিতৃক ছত্রাক বিরধী বৈশিষ্ট রয়েছে, যা খুশকিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মিশ্রনটি লাগিয়ে রাখতে হবে ১:৩০ মিনিট এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে। চুল হবে উজ্জল সিল্কি ও চুলের কালার টাও অনেক সুন্দর হয়।
ত্বকের সৌন্দর্যের ড্রাগন ফলঃ
ডাইবেটিসঃ
ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ এই রোগের রোগীকে নিয়মিত চেকআপে রাখা উচিত। এই রোগে রোগীর দেহে রক্তের সুগারের পরিমাণ যত কম রাখা যায় ততই রোগীর জন্য ভালো। ড্রাগন ফলে অনেক ধরনের ভিটামিন ও খনিজ থাকে যা রক্তে সুগারের স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, এবং শরীরে ইনসুলিন বানাতে সহায়তা করে। ড্রাগন ফলকে প্রতিদিনের আহারে রাখার চেষ্টা করুন।
সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের ঔষধ কিংবা ইনসুলিনের পাশাপাশি একটা হেলদি লাইফ স্টাইল মেন্টেন করতে হয়। যেখানে ব্যালেন্স ডায়েট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যায়ামের দরকার আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের ভালো রেজাল্ট হিসাবে ড্রাগন ফল খুবই উপকারী। বিশেষ করে যারা প্রি ডায়াবেটিক কন্ডিশনে আছেন অর্থাৎ যাদের এখনো ডায়াবেটিস হয় নাই, কিন্তু তাদের সুগার লেভেলটা বডার লাইনে আছে কিন্তু যাদের জেনেটিক কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি এই পর্যায়ে আছেন তাদের জন্য ড্রাগন ফল আদর্শ খাবার। কারণ ড্রাগন ফলে খুব অল্প পরিমানে সুগার থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে মাত্র ৯ গ্রাম সুগার থাকে এবং ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। যা খুবই সামান্য এবং এর গ্লাইসোমিক ইনডেক্স অনেকটাই কম। তাই যারা প্রি ডায়াবেটিক কন্ডিশনে আছেন এখন থেকে মিষ্টি জাতীয় ফল অ্যাভয়েড করতে পারেন এবং তার পরিবর্তে ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
হাঁপানিঃ
হাঁপানি সর্দি কাশি এবং স্নায়ুজরিত রোগ আমাদের জীবনে মারাত্মক আঘাত আনতে পারে এবং আমাদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপে প্রভাবিত করতে পারে। এই রোগ ফেলে রাখা উচিত নয় এ রোগের চিকিৎসা সময়মতো করা উচিত। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনের উপস্থিতি থাকে যার কারণে এই ফল হাঁপানি রোগ সারাতে অনেক লাভদায়ক।
ওজন কমাতেঃ
ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে শরীরের মেদ কম হয়। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যে কারণে শরীরে ওজন বাড়ে না সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন ছাড়াতে ড্রাগন ফল রাখুন।
আমরা এতক্ষণ ধরে ড্রাগন ফলের সুবিধার কথা জানলাম কিন্তু ড্রাগন ফলের কিছু সমস্যা
আছে। সেগুলোর ব্যাপারেও আমাদের জানা দরকার। চলুন জেনে নেই ড্রাগন ফলের
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে।
কিছু কিছু ব্যক্তির ড্রাগন ফল খাওয়ার কারণে ডায়রিয়া হয়। ড্রাগন ফল সেবন করার অনেক সুবিধা তবে অধিক মাত্রায় সেবন শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। ড্রাগন ফল খাওয়ার কারণে যদি আপনি কোন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ড্রাগন ফল খাওয়া বন্ধ করুন। এবং আপনার নিকটস্থ কোন সাধারণ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
আজকের মত এই পর্যন্তই আপনাদের কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না।
ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url