""

শিক্ষক সহায়িকা প্রাক প্রাথমিক

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ১ম পর্ব

 প্রাথমিক শিক্ষায় আগত নতুন শিক্ষকবৃন্দদের জানাই অগ্রিম শুভেচ্ছা। প্রাক প্রাথমিক নতুন শিক্ষকদের যা জানতেই হবে-

শিক্ষক সহায়িকা প্রাক প্রাথমিক

ভূমিকাঃ

  • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
  • মূলনীতি
  • শিশুর বিকাশ ও বিকাশের ক্ষেত্র
  • অর্জন উপযোগী যোগ্যতা
  • প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন কাজ
  • প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার শিখন শেখানো সামগ্রির তালিকা ব্যবহারের নির্দেশনা
  • সাপ্তাহিক ক্লাস রুটিন
  • বাৎসরিক পরিকল্পনা থেকে সাপ্তাহিক রুটিন অনুযায়ী দৈনিক পাঠ পরিকল্পনা তৈরি
  • প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্য
  • শিক্ষকের জন্য তথ্য ও নির্দেশনা বলি

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বা স্কুল হল অনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী বছর মেয়েদের শিক্ষাস্তর যেখানে শিশুর সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনুষ্ঠানিক শিক্ষায়  শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত অভিষেক ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা মূলত ৫-৬ বছর বয়সী শিশুদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষাগত ও সামাজিক বিকাশের মজবুত ভিত্তি করে থাকে। এই ভিত্তি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১.১ লক্ষ্যঃ

আনন্দময় ও শিশু বান্ধব পরিবেশে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার বয়সের শিশুদের ( ৫ + বছর ) বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, নান্দনিক, বুদ্ধিবৃত্তি ও ভাষাবৃত্তিয়  তথ্যা  বিকাশে সহায়তা দিয়ে আজীবন শিখন এর ভিত্তি রচনা করা এবং প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গনে তাদের সনন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত অভিষেক ঘটানো।

১.২ উদ্দেশ্যঃ

  1. আনন্দময় ও শিশু বান্ধব পরিবেশে বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিশুর সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
  2. শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা।
  3. শিশুর সৌন্দর্য নান্দনিকতাবোধ ও সুকুমারবৃত্তি বিকাশের সহায়তা করা।
  4. শিশুকে পারিবারিক সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সম্পর্কে সচেতন করা।
  5. নিজস্ব সাংস্কৃতিক আচার, কৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় এর পাশাপাশি এর চর্চায় উৎসাহিত করা।
  6. নৈতিকতার মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতি বিকাশ ও সহায়তা করা।
  7. শিশুর স্থুল ও সুক্ষ পেশী তথা চলন পেশীর বিকাশে সহায়তা করা।
  8.  স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নিরাপত্তা বিধানে সহায়তা করা।
  9. শিশুর ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করা।
  10. প্রারম্ভিক গাণিতিক ধারণা, যৌতিক চিন্তা ও সমস্যার সমাধানের যোগ্যতা অর্জনের সহায়তা করা।
  11. পরিবেশের পরিবেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে অনুসন্ধানের সহায়তা করা।
  12. শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত কল্পনা সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে সহায়তা করা।
  13. শিশুর আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বিকাশের সহায়তা করা এবং নিজের কাজ নিজে করতে উদ্বুদ্ধ করা।
  14. আবেগ বুঝতে পারা ও তার যথাযথ প্রকাশিত করা।
  15. শিশুকে পারস্পরিক সমঝোতা, সহযোগিতা ও ভাগাভাগি করতে করা।
  16. শিশুকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী করে তোলা ও মতামত প্রকাশের উৎসাহিত করা।
  17. শিশুকে বিজ্ঞানমনঙ্গ করে গড়ে তোলা।

মূলনীতিঃ

শিশুর বৃদ্ধি বিকাশ ও শেখা তার পরিবার চারিপাশের পরিবেশ ও সমাজ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। তাছাড়া সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং শিশুর বিকাশ ও শেখার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসমূহ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শিশুকে পরিপূর্ণভাবে বুঝে এবং তার বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করে সমন্বিতভাবে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায়ন ও দৈনন্দিন শিখুন ও শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কিছু ধারনা, নীতি ও বিশ্বাস অনুসরণ করতে হবে এবং সকল কার্যক্রমে তার প্রতিফলন থাকতে হবে। তবে শিশুর সুপ্ত সম্ভাবনা শারীরিক বিকাশের সহায়তা করার পাশাপাশি তার পরিবর্তে জীবনের শিক্ষার জন্য শক্ত ভিত রচনা করা সম্ভব হবে। তাই প্রাকপ্রথম শিক্ষাকম প্রণয়নে ও বাস্তুবায়নে মুক্ত ধারণা, নীতি ও বিশ্বাস সমূহকে মৌলিক নীতিমালা হিসেবে অনুসরণ করা হয়েছে।

১) শিশুকেন্দ্রিকতা ( Child centeredness ) 

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার একটি নতুন নীতি হলো শিশুকে বোঝা, তার ক্ষমতায় আস্থা রাখা এবং তার স্বভাব, প্রকৃতির ব্যক্তিগত ও মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। শিশুর বুদ্ধি বিকাশ ও শেখা প্রধানত পরিবার বিদ্যালয় এবং সমাজ দ্বারা প্রভাবিত। পরিবার, বিদ্যালয় এবং সমাজ এই তিনটি পর্যায়ের সমন্বিতভাবে  কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে তা শিশুর সুপ্ত ও অফুরন্ত সম্ভাবনা বিকাশে এবং সমৃদ্ধ জীবন যাপনের দিকে তাকে এগিয়ে নিয়ে সহায়তা করবে। ফলে শেখার মানসিকতা ও স্বীকার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশু আজীবন শিখনের ( Life-long learning ) জন্য প্রস্তুত হয়।

২) সক্রিয় শিখন ( Children as active learner )

শিশুরা সহজাতভাবে জন্মের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখে। জন্মের পর থেকে প্রণয়ত যে অভিজ্ঞতা ও পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শিশু বড় হয়, সেখানে সক্রিয় ও সহজাত অংশগ্রহণ তার শিক্ষনের মূল ভিত্তি। চারপাশের মানুষ ও পরিবেশ সম্পর্কে জানার দুর্বিবার আগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার সহজ জাত মানসিকতার কারণে শিশু প্রথম চাহিদা হচ্ছে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ। কেননা শিশু স্বাভাবিকভাবেই সক্রিয় শিক্ষার্থী। আর তাদের বিকাশ ও শিখন প্রক্রিয়া যেহেতু বাড়ি বিদ্যালয় ও চারিপাশের সামাজিক পরিবেশের দ্বারা প্রণয়ত প্রভাবিত হয় সেহেতু সকল পর্যায়ে তার সক্রিয় শিখনের সুযোগ সৃষ্টিিই শিশুর বিকাশ ও শিখনের মূল মন্ত্র।

৩) পরিবারের সম্পৃক্ততা ( Family involvement )

পারিবারিক প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ রথ ভাবে শিশুর গড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। শিশুর ব্যক্তিত্ব, নিজের সম্পর্কে ধারণা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ মাতা- পিতা ও পরিবার অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা ভীষণভাবে প্রবাহিত হয়। শিশুর যত্ন সম্পর্কে মাতা পিতার জ্ঞান, প্রত্যাশা ও সন্তান লালন পালনের ধরন শিশুর পরবর্তী জীবনের নানা দিকের ওপর প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে রয়েছে শিশু নিজের যত্ন নেওয়ার ক্ষমতা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যালয়ে তার শেখার প্রক্রিয়া এবং সমাজে অন্যান্যদের সাথে মিলেমিশে থাকার প্রবণতা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে মাতা পিতা হলেন একাধারে শিশু প্রথম শিক্ষক এবং শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন।
সুতরাং শিশু বিকাশে পরিবার একটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক এবং প্রাক- প্রাথমিক শিক্ষায় শিশু সাফল্যের জন্য পরিবারের সম্পৃক্ততা অন্তত জরুরী।

৪) স্কুল - সক্রিয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান ( School as responsive social institute )

বিদ্যালয় বৃহত্তর সমাজের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ এবং এটি পরিবার ও সমাজের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে স্কুল কে এমন কিছু বিষয় প্রদান করতে হয় যা শিশুর জানার আগ্রহে উদ্দীপনা দিতে, নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ও শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধি ভিত্তিক, নৈতিক ও নান্দনিক তথা সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করতে অত্যন্ত জরুরী। 
বিষয় সমূহ হলো:- শিশুর পারিবারিক প্রেক্ষাপট বোঝা এবং বাবা-মা ও পরিবারে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের সাথে অংশী দায়িত্ব ও সম্পর্ক স্থাপন করা।

 লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং মূলনীতি আমরা প্রথম পর্বে জানলাম। ভূমিকায় আরো যে সকল বিষয় রয়েছে দেখতে বা জানতে চাইলে কমেন্ট করে জানাবেন। ইনশাআল্লাহ আমি দেয়ার চেষ্টা করব। আপনার একটি কমেন্ট আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে পোস্ট লেখার জন্য। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url