""

ডেঙ্গু রোগের লক্ষন ও প্রতিকার

জ্বর যখন হচ্ছে এই সময়ে কারো কারো ঠান্ডা কাশি থাকছে আবার কারো কারো থাকছে না। তো ডেঙ্গু জ্বর হলো কিনা বা সাধারণভাবে জ্বর হলে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি যে ১-২ দিন আপনি বাসায় থেকে নাপা বা প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খান। কখন একজন রোগী বুঝতে পারবে যে এটা নিয়ে তার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?

ডেঙ্গু রোগের লক্ষন ও প্রতিকার

পোস্ট সুচিপত্র: ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

লক্ষন:০১

আমরা সবাই জানি যে ডেঙ্গু অনেকদিন ধরে আমাদের মাঝে আছে। ডেঙ্গু জ্বরের মূল লক্ষণ হচ্ছে হঠাৎ করে জ্বর আসবে এবং জ্বরটা এসে সাধারণত দেখা যায় প্রথম দিন অথবা দ্বিতীয় দিন এই জ্বরের মাত্রা বা প্রকোপ বেশি ১০২ ডিগ্রী ফারেনহাইট ১০৫ পর্যন্ত হয়ে যায়। বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে শরীর ব্যথা, চোখ বা চোখের পিছনে ব্যথা, চোখ নাড়াতে গেলে ব্যথা এই ব্যথাটা আমরা ডেঙ্গু জ্বর ছাড়া অন্যান্য জ্বরে তেমন একটা পায় না। অন্যান্য ইনফ্লুয়েন্স, জোরে মাথা ব্যথা হয় শরীর ব্যথা হয়, তো ডেঙ্গু জ্বরে এই ব্যথাটা বেশি হয় । বিশেষ করে মাথাব্যথা।

 এবং তার সাথে যেটা হয় সাধারণত অন্য জলের সাথে যেমন ইনফ্লুয়েন্স জনিত জ্বর করোনাভাইরাস ও তার অন্তর্গত সেখানে সর্দি কাশির প্রকোপ টা বেশি থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুতে দেখা যায় সর্দি-কাশির প্রকোপ কম । তেমন একটা সর্দি-কাশি থাকবে না, বরং শরীর ব্যথা ও উচ্চ মাত্রায় জ্বর ডেঙ্গু রোগের প্রধানতম প্রধান লক্ষন এর সাথে একটু বমি ভাব হতে পারে বমি হয় অনেকের পেট ব্যথা হয়। আপনার  টয়লেটের যে প্রকৃতি সেটা একটু পরিবর্তন হতে পারে নরম পায়খানা হতে পারে এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে। এগুলো হচ্ছে জ্বর এবং ব্যথার পাশাপাশি অন্যান্য যে লক্ষণ।

এছাড়াও কাশি, খুদামন্দা, অস্বাভাবিক দুর্বলতা, ক্লান্তি, শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ ( মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, কালো রঙ্গের পায়খানা, মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত ), রক্তচাপ কমে যাওয়া, পালস রেট বেড়ে যাওয়া।

এডিস কামড়ানোর কতদিন পর জ্বর আসে?০২

ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী মশার নাম এডিস, তবে আমাদের দেশে এটি ডেঙ্গু মশা নামে বেশি পরিচিত। এডিস মশা কামানোর কারণেই ডেঙ্গু জ্বর হয়। যদিও এই মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডক্টর  সাবেরুন নহার বলেন, রোগে আক্রান্ত হবার পর থেকে লক্ষণ দেখা দিতে ৫ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। এ সময় কে বলা হয় ইনকিউরেশন পিরিয়ড। সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসে। আরে জ্বর থাকে পাঁচ থেকে ছয় দিন পর্যন্ত।

আক্রান্ত ব্যক্তি কতদিনে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে?৩

ডেঙ্গু ভাইরাসের চার রকম ছাড়ো টাইপ পাওয়া যায়। এগুলো হলো ডেন -১, ডেন -২, ডেন -৩, ডেন -৪ । একজন মানুষ তার সারা জীবনে সর্বোচ্চ চারবার ডেঙ্গুড়তে আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ একবার একটি ধরনের আক্রান্ত হবার পর তা সেরে গেলে তারপর তার শরীরে যে এন্ট্রি বডি তৈরি হয় তা সারা জীবনের জন্য কাজ করে। এরপর যদি তিনি আবারও আক্রান্ত হন সে ডেঙ্গুর ভিন্ন কোন ধরন থাকে। অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন যতদিন রোগীর শরীরের রক্তে ভাইরাস থাকবে ততদিন জ্বর থাকবে। কেবল মাত্র রক্ত  জীবনমুক্ত হলেই ডেঙ্গুজর ছেড়ে যায়।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ছাড়লেই কি তিনি সুস্থ?৪

অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে অনেকেই তা বুঝতে পারে না। সামান্য শরীরে ব্যথা ও একটু জ্বরের লক্ষণ থাকলেও সাধারণত এ সময় সর্দি কাশিও থাকে না। আজ থেকে সাত দিনের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে জটিলতা তৈরি হয়। কারণ প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর, শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয় সেটির সঙ্গে  ভাইরাসের নতুন এন্টারটেইনের এক ধরনের রিঅ্যাকশন হয়। যার ফলে হেমোরেজ বা platinate কমে যাওয়ার মত জটিলতা তৈরি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ক্ষেত্র বিশেষে প্রথমে খুব জ্বর ওঠার পর তা কমে যায়। এ সময় কিছুটা সুস্থ বোধ হলেও এটি আসলে সবচেয়ে জটিল পর্যায়। কেননা এই সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের  platinate কমে যায়, এবং রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ সময়ে কিছুটা সত্যবোধ করায় শিশুরাও খেলাধুলা করতে চাই।
তবে এটা একেবারেই করা যাবে না। এ সময় যেকোনো ধরনের পরিশ্রমের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম করতে হবে।

এডিস মশা কত দিন বাঁচে?৫

কীর্ততবীদ ডক্টর মোহাম্মদ কবিরুল বাশার বলছেন, একটি পূর্ণবয়স্ক এডিস মশা গড়ে ১৫ থেকে ৪০ দিন বাচে। মূলত তাপমাত্রার উপর এডিস মশার আয়ু নির্ভর করে। যেমন শীতকালে এডিস মশা বেশি বাঁচে, আর গরমকালে এডিস মশার বৃদ্ধি বা বংশবিস্তার দ্রুত হয় বলে এ সময় কম বাচে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়?৬

এক সময় বলা হতো এডিস মশা শুধুমাত্র দিনের বেলায় কামড়ায়। কিন্তু সম্প্রতি এডিস মশার চরিত্র বদলেছে, এখন দিনে রাতে সব বেলাতেই কামড়াতে পারে এডিস এজেপ্টি। বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে।

এডিস মশা কতবার কামড়ায়?৭

কেবল মাত্র স্ট্রেডিস  মশাই কামড়ায়। ফলে একমাত্র স্ট্রেডিস মশারই জীবাণু বহন করে। স্ট্রেডিস মশা কেবলমাত্র পেটে ডিম থাকা অবস্থাযতে কামড়ায়। ডক্টর কবিরুল বাসার বলেন, লাইভে করার পরীক্ষায় দেখা গেছে একটি এডিস মশার জীবন দশায় ঘরে চার থেকে ছয় বার কামড়ায়।

এডিস মশা কিভাবে বাহক হয়? কতদিন থাকে?৮

এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু হয়, এমন একটি ভুল ধারণা অনেকের মধ্যেই প্রচলিত হয়েছে। যা সঠিক নয়, আরেকটি ভুল ধারণা হলো আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পরে সুস্থ একজনকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু জ্বর হবে। ডক্টর বাসার বলেন, এডিস মশার মাধ্যমে তখনই একজনার ডেঙ্গু জ্বর হবে যখন মশাটি ভাইরাস ইনফেক্টেড হবে, অথবা ভ্যাইরামিক হবে। অর্থাৎ একটি এইডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ে যখন ভাইরাস ছড়ানোর উপযোগী হয় তখন তাকে বলা হয় ভাইরামিক। মূলত আক্রান্ত কাউকে কামানোর পর ডেঙ্গু মশাকে ভাইরাস বিস্তারের উপযোগী হতে একটি জীবনচক্র পূরণ করতে হয়। 

অর্থাৎ আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর মাধ্যমে মশা দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। এরপর ডিম পাড়া এবং বংশবিস্তারে মাধ্যমে ওই মশার ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম হয়। এরপর মশাটি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জীবনের ছড়াতে পারবে। এছাড়াও জীবন বহনকারী ওই মশা যত ডিম পারে তার সবগুলোতেই ভাইরাস থেকে যায়। আর সেই দিন যদি প্রকৃতিতে অনুকূল পরিবেশ পায় তবে সেখান থেকে জন্মানো মশার কামড়েও ডেঙ্গুর ভাইরাস চালাতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সওভারিয়াল ট্রান্সমিশন এভাবে ভাইরাসের বাহক হয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু মশা জন্মাতে  পারে বলে জানান, কর্তিতবীদ ডক্টর কবিরুল বাশার।

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?৯

ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটি কেবলমাত্র মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে অন্য কারো এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এডিস মশা  ব্যতীত স্পর্শ বা অন্য কোনভাবে এ রোগ ছড়ানোর উপায় নেই। এমনকি অন্য প্রজাতির মশার মধ্যেও ডেঙ্গু ছড়ায় না।

ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে?১০

জ্বরের সঙ্গে গোসলের কোন সম্পর্ক নেই। যেকোনো জ্বরের মত ডেঙ্গু জ্বর হলেও গোসল করা যাবে। তবে অনেক বেশি জ্বর হলে অনেকের ঠান্ডা লাগে এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা কিংবা গোসলের পর দ্রুত চুল শুকিয়ে ফেলার বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে। এছাড়াও শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকলেও তা কমাতে গা মুছানো ও মাথা ধুয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কি খাবার খেতে হয়?১১

বেঙ্গলি রোগীকে সব ধরনের স্বাভাবিক নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ডাক্তার মোহাম্মদ গুনাহার বলেন ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে পানি স্বল্পতা হয়। তাই এই সময়ে রোগীকে তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হয়। সেই সাথে বাড়িতে ফল থেকে বের করার জুস, সুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন বা অন্যান্য তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। ওগুলো শরীরের পানি বা ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে ডায়াবেটিসে  আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাবারে কিছু বিধি নিষেধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথা:১২

খাবারের মধ্যেও ভারসাম্য থাকতে হবে, অনেককে দেখেছি দিনের দশ বারোটা ডাব খেতে, অনেকে লিটারে লিটারে পানি খাচ্ছে এগুলো অস্বাভাবিক।
আবার কিছু না করা ও ঠিক না। যদি কারো দিনে ৩ - ৪ ঘন্টা পর পর প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের রং হলুদ না হয়, তার মানে তার আদ্রতা স্বাভাবিক আছে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url