প্রতিনিয়ত আমরা প্রচুর তথ্য পাই। এই তথ্য প্রতিনিয়ত
বাড়ছে। কিছু তথ্য সঠিক আবার কিছু তথ্য সঠিক নয়। তথ্য খুঁজে পেতে
বুঝতে, মূল্যায়ন ও ব্যবহার করতে আমাদের যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে
হবে।
আমাদের সমাজ জীবনে তথ্য অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের সমাজ জীবনে তথ্য
নতুন কিছু শিখতে ও কি করতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
তাই আমাদের তথ্য জানতে হবে এবং তা সকল এর সঙ্গে বিনিময় করতে হবে। তথ্য বিনিময়
হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন বন্ধু, পরিবার ও অন্যান্য মানুষের সঙ্গে
আদান প্রদান করা হয়। তথ্য বিনিময়ে আমাদের নিরাপদ থাকতে, ভালোভাবে বাঁচতে এবং
বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তথ্য বিনিময়ে গুরুত্ব অপরিসীম।
দেশের সংক্রামক রোগ যেমন- করনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। এই তথ্যটি বিভিন্ন
মাধ্যমে প্রচারিত হলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
মানুষ এই তথ্যটি গ্রহণ করে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগ থেকে রক্ষা
পাবে। আবার মনে করো আবহাওয়া দিকে না বললেন যে প্রচন্ড জলেশ্বস হবে। এই তথ্যটি
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হলে আমার প্রিয় উপকূলের অনেক মানুষ জীবন ও সম্পদ
রক্ষা করতে পারবে। সমুদ্রের মাছ ধরলাম ও জাহাজগুলো নিরাপদ আশ্রয় থেকে
রাষ্ট্রীয় সম্পদ গুলো রক্ষা পাবে।
সূচিপত্রঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে , কি
আমরা বিভিন্নভাবে তথ্য বিনিময় করতে পারি। যেমন অন্যের সাথে কথা বলে চিঠি লেখে
ইত্যাদি। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি( আইসিটি) তথ্য বিনিময়ের
মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটার ইন্টারনেট ইমিউন টেলিভিশন রেডিও মোবাইল
ফোন ইত্যাদি হল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(আইসিটি) আইসিটি মানুষের
পারস্পরিক যোগাযোগ সহজ করেছে আইসিটি ব্যবহার করে
সহজেই তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিনিময়, বিস্তার, ও ব্যবহার করা যায়।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা কিভাবে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারি:
আমরা বই, টেলিভিশন, খবরে কাগজ অথবা রেডিওর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। তবে
ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সহজ। ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রান্তের কম্পিউটার গুলোকে সংযুক্তকারী বিশাল নেটওয়ার্ক। আমরা আমাদের
প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার
করে সহজে পেতে পারি। এছাড়া নিজস্ব উদ্ভাবন ও সংগীত তথ্য প্রকাশ করতে পারি।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ:
(১) search ইঞ্জিন যেমন-গুগল(google) ইয়াহু (yahoo) পিপীলিকা
(pipilika) ইত্যাদি ব্যবহার করি।
(২) যে বিষয়ে তথ্যটি অনুসন্ধান করছি সে বিষয় সম্পর্কিত মূল শব্দটি "search bar"
লিখে "search" লেখাটিতে অথবা "Enter key" তে চাপ দেই।
(৩) search ইঞ্জিনে যে ওয়েবসাইটে তালিকাটি এসেছে সেখান থেকে ওয়েবসাইট
বেছে নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যটি সংগ্রহ করি।
(৪) যতবার প্রয়োজন ততবার পূর্বের ধাপ গুলো পুনরাবৃত্তি করি। অথবা আরো
সুনির্দিষ্ট মূল শব্দ নির্বাচন করে প্রয়োজনীয় তথ্যটি অনুসন্ধান করি।
ইন্টারনেটে তথ্যটি অনুসন্ধানের পর প্রাপ্ত তথ্যটি আমরা খাতায় লিখে, ছবি তুলে,
ভিডিও রেকর্ড ,অথবা ডাউনলোড ,করে সংরক্ষণ করতে পারি। বর্তমানে আমরা তথ্য
সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি যেমন-পেন ড্রাইভ, সিডি, ডিভিডি,
মেমোরি কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করি।
কিভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য বিনিময় করব:
প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে অন্যদের সাথে তথ্য বিনিময় করতে পারি তা আমরা সবাই
জানি। টেলিফোন অথবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমি মানুষের সাথে কথা বলতে পারি। তথ্য
আদান প্রদানের জন্য চিঠি লিখতে পারি। বর্তমানে খুদে বার্তা (এসএমএস) ই-মেইল,
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন-ফেসবুক বা টুইটার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে
তথ্য আদান প্রদান করতে পারি।
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ । পৃথিবীর মানুষ সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া একটি দিনও
অতিবাহিত করতে পারে না । এক কথায় মানুষের জীবন যাত্রার সর্বস্তরে এর একটি অভাবনীয়
প্রভাব রয়েছে ।
তথ্য কী ?
তথ্য :- তথ্য হলো যেকোনো বিষয় সম্পর্কে উন্থাপিত কোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তর
যা ওই বিষয়টি সম্পর্কিত ঙ্গানকে সমৃদ্ধ করবে ।
তথ্য ও প্রযুক্তির সংঙ্গা :
কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় কথ্য সংগ্রহ ,একত্রীকরন,
সংরক্ষন, প্রক্রিয়াকরন এবং বিনিময়ের ব্যবস্থাকে তথ্য - প্রযুক্তি ( information
technology ) বলা হয় ।
তথ্য ও প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব :
প্রযুক্তি আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত, প্রযুক্তির কল্যাণে বিশাল পৃথিবী এখন
মানুষের হাতের মুঠোয়। এই বদৌলতে মানুষের সামনে উন্মুক্ত হচ্ছে মহাবিশ্বের সকল
বিষ্ময়। তৈরি হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টিকে জানার এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের দারুন
সুযোগ। কাজেই আল্লাহ নেয়ামত কি প্রযুক্তি ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা মানুষের
জন্য অপরিহার্য। প্রযুক্তির সহায়তায় অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ,প্রতারণা, তথ্য
সন্ত্রাসী, যৌন হয়রানি, উলঙ্গপনা ,নৈতিকতা বিবর্জিত সিনেমা, নাটক,
লেখালেখির ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত হওয়া যদি সহজ। অনুরূপভাবে সৃষ্টিকর্তার
সৃষ্টির রহস্য জানা ও বোঝা যে কোনো জিজ্ঞাসা জবাব বের করা, জ্ঞান-বিজ্ঞান
চর্চা করা কোরআন হাদিস ও ইসলামী শরিয়ার জ্ঞান অর্জন করা সহ কঠিন ও দুষ্প্রাপ্য
বিষয়ের অবগতি লাভ করাও নিত্যান্ত সহজ। এখন আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে মুসলিম
হিসাবে আমরা কি এর ইতিবাচক ব্যবহার করব নাকি নেতিবাচক। আমরা যদি দুনিয়াতে শান্তি
ও আখিরাতে মুক্তি চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের এর ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করতে
হবে। নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলতে হবে। পৃথিবীতে যা
কিছু কল্যাণকর ইসলাম তা গ্রহণ করার বৈধতা দায়। প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে নানা কল্যান
করে দিক। কাজেই প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হওয়া মানুষের জন্য বৈধয় নয় অনেক ক্ষেত্রে
জরুরিও বটে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
তোমাকে যা উপকৃত করবে সে দিকে তুমি ধাবিত হও এবং আল্লাহ সাহায্য কামনা করো। নিরাশ
হয়ো না।
শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি :
তথ্য প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ দ্বারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির
আবেদন, ফি ইত্যাদি পরিশদ, ভর্তি , ফলাফল তৈরি ও প্রকাশ, রেজিস্টেশন বা পরিক্ষার
ফর্ম পুরণ, বিভিন্ন ফলাফল বিশ্লেষন , শিক্ষা প্রতিষ্ঠারে মান নির্ধারন ,
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক ও প্রয়োজনিয় সিন্ধান্ত গ্রহন ইত্যাদি
কাজে অন্তত্য সহজ দূত ও নিখুত ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে
।
তাছাড়া, দেশে অবস্থান করলেও শিক্ষার্থীগন বিশ্বসেরা বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
ভর্তি , পড়াশোনা ও পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে
তথ্য প্রযুক্তির কল্যণে ।
বিঙ্গান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তি :
আমরা জানি বিঙ্গানের ক্রমোন্নতির ধারায় তথ্য প্রযুক্তি বর্তমান উৎকর্ষতায়
উন্নীত হয়েছে । ঠিক একইভাবে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যেই বিঙ্গানের
বহুমাত্রিক অগ্রগতিকে বহুগুনে ত্বারনিত্ব করে চলেছে । অন্যান্য সেক্টর তো রয়েছে
শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে পযালচনা করলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের সুফল বলে শেষ
করা যাবে না ।
অত্যাধনেক পদ্ধতিতে ও নিখুতভাবে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা দেয়া ,
ঘরে বসে বিশেষঙ্গ চিকিৎসকগণের পরামর্শ ও সর্বাধনিক চিকিৎসা পদ্ধতি জানা । সর্বশেষ
আবিষ্কৃত ঔষধ সংগ্রহ ও ব্যবহারের সক্ষমতা এনে দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি ।
ব্যাংক, বিমা ও আর্থীক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি :
ব্যাংকে অর্থ জমা ও উত্তলন ক্লিয়ারিং হাউস বা আন্তঃব্যাংক লেনদেন , রেমিট্যান্স
আদান - প্রদান , স্মার্ট কার্ড ব্যবহারে এটিএম বুথের মাধ্যেমে টাকা উত্তলন
,মোবাইল ব্যাংকিং , অনলাইন ব্যাংকিং , অনলাইন বিভিন্ন প্রকিকষ্ঠানের বিল গ্রহন ,
দীর্ঘ বা সল্পমেয়াদি ঋণ অনুমদন , ঋণের অর্থের পরিমান নির্ধারন , শেয়ার কেনা-বেচা
ইত্যাদি বহুবিধ কাযক্রম তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে আজকাল অতিসহজেই সম্পন্ন করা
যাচ্ছে ।
মোট কথা আর্থীক প্রতিষ্ঠান গুলোর ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহক সেবায় স্বচ্ছতা ও গতিশিলতা
আনয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভূমিকা প্রশ্নাতীত ।
অফিস আদালতে প্রযুক্তি :
আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের অফিস ব্যবস্থাপনায় পেশা
স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা , সময়ের সর্বচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ
একটি অনিবায্র বিষয় প্রজেক্ট প্রফাইল তৈরি , কর্মি ব্যবস্থাপনা , টেন্ডার সংরান্ত
কার্য়ক্রম , কমিশন বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষন ও প্রক্রিযাকরন
বিতরনে টেলিফোন, কম্পিউটার, পিন্টার , ইন্টারনেট প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার হয়ে
আসছে ।
তাছাড়া, বিচারিক কাযক্রমে একজন বিচারপ্রার্থী অনলাইনে মামলা দায়েরসহ
সাক্ষ্যপ্রমাণাদি সেখানে উপস্থাপন করতে পারছেন, যার ফলে বিচার প্রতিক্রিয়াতেও
গতিশীলতা বেড়েছে অনেকংশে ।
শিল্প ক্ষেত্রে প্রযুক্তি :
বিশ্ববাজার অনুসন্ধানের মাধ্যমে কলকারখানার কাচামাল সংগ্রহ , পণ্যের ডিজাইন
,উৎপাদন ও মাননিয়ন্ত্রনে উন্নত যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার , ঝুকিপূন্য ও প্রতিকুল
পরিবেশে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রন যন্ত্র রোবটের ব্যবহার, জীবানুমুক্ত খাদ্যপণ্য
তৈরির ক্ষেত্রে েইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার , উৎপাদিত পণ্যর চাহিদা
নিরূপন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বাজার ব্যবস্থাপনা , মজুদ ব্যবস্থাপনা, বর্জ
ব্যবস্থাপনা, উৎপাদিত পণ্যে ক্রেতা সাধারনের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন, অনলাইনে
অডার গ্রহন, পণ্য সরবারাহ, বিশ্ববাজার অর্থনীতির সাথে ভারসাম্য রক্ষা ,
বিশ্ববাজার প্রতিযোগিায় প্রবেশ, প্রাধান্য বিস্তার ইত্যাদি শিল্পসংলিষ্ঠ প্রতিটি
ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বীকারয ।
কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি :
কৃষি প্রধান দেশ হিসাবে বাংলদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য
প্রযুক্তির প্রয়োগ নতুন দিগান্তরে সূচনা করেছে বহু পূর্বেই । জমির ধরন মাটির
গুনগত মান , দেশি বা বিশ্ববাজারে চাহিদা অনুযায়ি সকল তথ্য জেনে লাাভ জনক শস্য
নির্বাচন সম্ভব তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ।
বিজ বপনের সময় নির্ধারন ও তার পদ্ধতি, জমির উর্বরতা বৃদ্ধীর কৈাশল, জমি তৈরির
প্রকিয়া, পোকামাকর আক্রমনের ধরন, পোকার প্রকৃতি নির্নয় ও নিধন, রোগ নির্ণয় ও
পতিরধ ব্যবস্থা ইত্যাদি কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্য়ক্রম তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তির কল্যাণে সম্ভব হচ্ছে ।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রযুক্তি :
আজকাল তথ্য ও প্রযুক্তি ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা কল্পনাও করা যায় না । ব্যক্তিগত
তথ্য ও যোগাযোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের গনপরিবহন প্রযন্ত সর্বস্তরে
যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগে ব্যপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ।
মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ই - কমার্স, ই- মেইল, টেলিকমিউনেকেশন ওয়্যারলেস যোগাযোগ
ব্যবস্থা উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে ।
শিল্প সংস্কৃতি ও বিনদনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি:
তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বিশ্বে শিল্প- সংস্কৃতি ও বিনদনের ক্ষেত্রে
বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে । অবাধ তথ্য প্রবাহের কারনে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও
বিনদনের নব নব মাত্রা সংযুক্তি মানব জীরনকে আয়েশি করে তুলেছে ।
সেই সাথে যগোপযোগি বিভিন্ন সাংস্কৃতি সম্পকে অবহিত হয়ে তদনুযায়ি দেশিয় সাংস্কৃরি
মূলধারার পাশাপাশি এর মানোন্নয়নও ঘটানো সম্ভব হচ্ছে । আজকাল দর্শক- শ্রতাদের
চাহিদানুযায়ি আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা অনেক ।
তথ্য ও প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব :
প্রযুক্তির যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে, তেমনি অনেক অসুবিধা রয়েছে। আমরা
সবাই জানি যে বস্তুর সুবিধা থাকে সে বস্তুর অসুবিধাও থাকে।
উন্নত বিশ্বের শিশুদের মত বাংলাদেশের শিশু কিশোরদের মধ্যেও প্রযুক্তির
ব্যবহারের প্রতি আসক্ত বাড়ছে। আলট্রা প্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণের আসক্তির
কারণে শিশু কিশোরদের প্রযুক্তির প্রতি এই ক্রম আসক্তি পরিপূর্ণ মানসিক ও
শারীরিক বিকাশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। মা ও শিশুর মধ্যে ও দূরত্ব সৃষ্টি
হচ্ছে। মায়ের জন্য তারা আলাদা সময় বের করতে পারছে না। যার ফলে পারিবারিক
প্রথাগত শিক্ষা, শিষ্টাচার, ভালো এডুকেশন তথা ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণ
অর্জন থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কো কারিকুলার এক্টিভিটিতে নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে
নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দিন দিন শিশু ও কিশোররা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
অপরিমিত বয়সেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের অভ্যস্ত হয়ে পড়ার
আশঙ্কা বাড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ভিডিও গেম মোবাইল ল্যাপটপ ও
বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নির্ভরতা সৃষ্টি হচ্ছে
।এই ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উন্নতি ফলে শিশুসহ আবালবৃদ্ধবনিতা প্রযুক্তির প্রতি
আকর্ষণ বেড়েই চলছে। ফলস্বরূপ পরিবার পরিজনের মধ্য আন্তরিকতা কমে যাচ্ছে। বাবা
মায়ের অজান্তেই সন্তান কাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখছে তা জানার সুযোগ থাকছে না।
যুদ্ধের মধ্যে অধিক মাত্রায় ভিডিও গেম বা ফেসবুকের মত ভার্চুয়াল লাইফে
সংশপ্ততার কারণে ধীরে ধীরে তা আসক্তিতে পরিণত হয়। বাড়ন্ত বয়সে এই অস্বাভাবিক
আকর্ষণ ক্রমান্বয়ে নেশায় পরিণত হয়। রাতের পর রাত জেগে এসব কাজে মগ্ন থাকার পর
দিন সকালে ক্লাসে ভীষণ অমনোযোগী থাকে এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মেজাজ
খিটখিটে হয়ে যায়। বাবা-মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করেনা। সে নিজের প্রতি আন্ত
বিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
বিরতিহীন ভাবে এসব প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে শিশুদের চোখ ও মস্তিষ্কের
মধ্য মাত্রাতিরক্ত চাপ পড়ে। রেডিয়েশনের প্রভাবে ধীরে ধীরে দৃষ্টি শক্তি
কমে যায়। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না। তারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কোন কিছুতে
আগ্রহ থাকেনা। কোন টাইপ পরিশ্রম কিংবা খেলাধুলা তারা করতে চায় না। সারাক্ষণ
আঙ্গুল চোখ ও মস্তিষ্ক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাদের মনে চাহিদা পূরণ করতে চাই।
অন্যদিকে বিরহীনভাবে ভিডিও গেম খেলার কারণে কনভালর্শন তথা খিচুনি কিংবা মৃগীর মত
স্নায়বিক সমস্যা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় শুয়ে অথবা বসে ভিডিও গেমস বা ফেসবুকিং
করার ফলে হাঁটু ও কোমরে ব্যথা দেখা দেয়। কয়িক পরিশ্রমের খেলাধুলা না করায়
অল্প বয়সে তাদের শরীরের চর্বি জমে যায়। এতে করে লিভার কিডনিসহ হৃদরোগের ঝুঁকি
বেড়ে যায়। শিশুরা এখন মা-বাবার মনোযোগ পেতে তাদের প্রিয় ডিভাইস গুলোর সাথে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শন
পার্কার স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন, এই প্লাটফর্ম আসক্তিপণ্য করে বানানো
হয়েছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠাতার
সময় তার কোন ধারণা ছিল না যে তিনি কি করছেন। তিনি আরো বলেন, শুধু সৃষ্টিকর্তা
জানেন, এটি আমাদের শিশুদের মস্তিসির সাথে কি করছে।
আজকের শিশু আগামী ভবিষ্যৎ ও জাতির মেরুদন্ড। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বের
প্রশ্নই আমাদের বোধোদয় হওয়া উচিত। মূলত প্রযুক্তিপূর্ণ ও ফেসবুক সব সমস্যা
নয়, আমরা কিভাবে এগুলো ব্যবহার করছি, সেটার অন্যতম বিবেচ্য
বিষয়। শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি আসক্তি দূর করতে জনসচেতনা
প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাবা মায়ের যেমন দায়-দায়িত্ব সন্তানেরা কি করছে
সেদিকে নজর রাখা, তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটানো, সাহচর্য প্রধান; তাদের
ভার্চুয়াল প্লে গ্রাউন্ডের পরিবর্তে খেলার মাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলা।
যাতে তাদের মানসিক বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈহিক গঠন ও সামাজিক জ্ঞানের পরিপূর্ণতা
আছে। তাদের বোঝানো যে আপনি তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সবকিছু সব বয়সের জন্য
নয়-এই বাস্তবতা তাদের নিকট খোলাসা করতে হবে। এজন্য শিশু ও কৃষকদের সাথে
নিয়মিত কাউন্সিলিং জরুরী। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও মহান দায়িত্ব রয়েছে
প্রযুক্তির ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দিয়ে সচেতন করে গড়ে
তুলতে। সেই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত
করে সত্যিকারের মানুষ করে দিতে হবে।
অনলাইনে গেমসের আসক্তি আরো ভয়াভহ প্রভাব ফেলেছে সামাজীক জীবনে । ঘন্টার পর
ঘন্টা কারক্ষেপন মাদকাশক্তির মত ভয়ংকর নেশাগ্রস্থতায় নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে
সমাজের একটি বিরাট অংশ । এসব গেমসের জন্য নিজের সন্তান বিক্রির মত চরম
অনৈতিক ঘটনারও সংঘটনের খবর পাওয়া গেছে । অনলাইন গেমসে আসক্ত হয়ে
ব্যবহারকারিদের মৃত্যুমুখে পতিত হয়ার ঘটনাও বিভিন্ন দেশে ঘটেছে। জৈনিক
রাশিয়ান নাগরিকের সৃষ্ট গেমসের মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ে আন্তহত্তা বা অকাল
মৃত্যুর খবর সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত আছি । বিদেশি সাংস্কৃতিক বিরুপ প্রভাব
তো রয়েছেই ।
আজকাল প্রতিটি দেশের চলোচিত্রে মারামারি, খুনাখুনি ও অন্যান্য
ভায়োলেন্স অনুকরন করে উঠতি বয়সি ছেলেদেরকে সাহিংস করে তুলেছে । এসবের ফলে
আচার - আচরন , মানষিকতা, পোশাক- পরিচ্ছেদে নেতিবাচক পরিবর্তন
লক্ষনিয় মাত্রায় দেখা যাচ্ছে । অবাধ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহারে
কুরুচিপর্ণ ছবি- বিডিও এখন সল্পমূলের মোবাইল ফোনেও দৃশ্যমান ।
পরিবেশ দূষণ:
পরিবেশে যে উপাদান যেমন মাটির পানি বায়ু এই ধরনের বিভিন্ন উপাদান যখন দূষিত
হয় তখন কিন্তু আমাদের পরিবেশ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে পরিবেশ দূষণ
প্রযুক্তির জন্য কিভাবে হয়?
-
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের যখন আমরা কয়লা পরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তখন
পরিবেশের বায়ু দূষণ হয়। কয়লা যখন আমরা পোড়ায় তখন কার্বন
ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস যখন বায়ুমন্ডলে
যায় তখন বায়ুমণ্ডল দূষিত হয়ে যায়। এতে করে কি হলো এই যে প্রযুক্তির
উন্নয়নের জন্য আমরা কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করি এতে আমাদের পরিবেশ
দূষিত হয়ে গেল।
-
বায়ু দূষণের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও এসিড বৃষ্টি। বায়ু যখন দূষিত হয়ে
যাচ্ছে তখন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা
বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যাসিড বৃষ্টি তে সালফার-ডাই-অক্সাইড বা নাইডোজেন
ড্রাইঅক্সাইড এই ধরনের বিভিন্ন ক্ষতিকারক এসিড পানিতে মিশে পানি দূষিত
হয়।
-
রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার মাটি ও পানি দূষণ করে। রাসায়নিক সার
এবং কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল কৃষি তে উন্নয়ন সাধন করার জন্য। কিন্তু
অধিক ফসল ফলানোর জন্য আমাদের মাটি এবং পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে এইদিকেও আমাদের
খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের এমন ভাবে তৃণমূলক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে
হবে যাতে মাটি ও পানি দূষিত না হয়। এসব বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখে প্রযুক্তি
ব্যবহার করলে আমাদের পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না।
অস্ত্র তৈরি ও এর ব্যবহার:
-
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তৈরি করা হয় যুদ্ধের
জন্য যেমন ট্যাংক, বন্দুক, বোমা ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে এগুলো
অস্ত্র সঠিক ও যথাযথ ব্যবহার করা হয় না। চুরি ডাকাতি
খুন ছিনতাই এরকম আরো অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে এইসব অস্ত্র বর্তমানে ব্যবহার
হচ্ছে ।প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর ব্যবহার করা
হচ্ছে খারাপ দিকগুলোতে।
তথ্য ও প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রনহীন অবাধ ব্যবহারের ফলে পারিবারিক, সামাজিক এমন কি
রাষ্ট্রীয় পযায়ে নেতিবাচক অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে । সামাজিক যোগাযোক মাধ্যম (
যেমন- ফেজবুক , টিুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি ) । ব্যবহারে তীব্র
আসক্তির ক্ষতিকারক প্রভাব আশঙ্কাজনক মাত্রাই বেরে যাচ্ছে ।
এর ফলে অল্পবয়সি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অমনোযোগি নৈতিক ও অনৈতিকতার তফাত শনাক্ত
করতে না পারা, শুদ্ধাচারে অনেহাসহ নানা অজামাজিকতার লিপ্ততা তাদের পেয়ে বসেছে
।
অভিভাবকগনও এর আসত্তি থেকে নিস্কৃতি পাচ্ছে না; যার দুরন কর্ম ক্ষেত্রে শ্রমঘন্টা
নষ্ট , অনৈতিক কাজকর্মে অর্থহীনভাবে সময়ক্ষেপন, সাভাবিক পারিবারিক নিয়মাচারে
ব্যত্যয় , সন্তানদের সময় না দেয়া বা তাদের প্রতি যন্তশীল না হওয়ায় অনেক অনভিপ্রেত
ঘটনার জন্ম হচ্ছে ।
সাস্থ্যগত সমস্যা:
তথ্য ও যোগাযোগ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি বিশেষত কম্পিউটারের অতাধিক ব্যবহারের ফলে
চোখের উপরে চাপ পড়ে , মাথা ব্যথ্যা, হাত ব্যথ্যা, ঘার ও পিঠের সমস্যায় আক্রান্ত
হতে দেখা যায় অনেককেই । রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহার , কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে
সময় কাটানোর ফলে স্নায়ুবিক ও মস্তিকের নানাবিধ অসুস্থ্যতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে
।
পরিশেষে বলা যায় চিকিৎসার জন্য ব্যবহিত সার্জারির চাকুর ব্যবহার যথাযথ ভাবে না
করে খুন খারাবির কাজের অপব্যবহার রোধ করার দ্বায়ীত্ব সার্জারির চাকুর নয়, এই
দ্বায়ীত্ব আমাদের সবার । একই ভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার
নিশ্চিতের মাধ্যমে মানব সভ্যতাকে আরো অন্যান্য মাত্রায় অধিষ্টিত করার জন্য
প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেই হবে ।
ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url