আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা-খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা
মুখে এলোভেরা জেলের ব্যবহার নিয়ম-কোন এলোভেরা জেল ভালো
সকালে খালি পেটে এক কাপ গ্রিন টি পান করা অনেকের অভ্যাস। আদা যোগ করলে এর উপকারিতা আরো বেড়ে যায়। সকালের শুরুতে এক কাপ আদা দিয়ে গ্রিন টি পান করার অভ্যাস আমাদের দৈনিক জীবনের এক অসাধারণ পরিবর্তন এনে দিতে পারে। এই পানিয়ের উপকারিতা অসংখ্য - এটি শরীর চর্চা, মানসিক স্বাস্থ্য, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণে ও সহায়ক।
পোস্টসূচিপত্রঃআদা আমাদের হজম শক্তি বাড়ায়, সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করে, এবং গ্রিন টি হল অ্যান্টি-অক্সাইড অ্যান্ড এক সমৃদ্ধ উৎস। এই দুইয়ের মিশেলে সৃষ্টি হয় এক অপূর্ব পানিয়ের, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অবদান রাখে। এই ব্লগে আমরা খালি পেটে এই পানীয় পানের অসাধারণ সব উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। আসুন দেখে নেই, আপনার দিনের শুরুটা কেন এই পানীয় দিয়ে হওয়া উচিত।
গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা
গ্রিন টি একটি প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর পানীয়, যা বহু প্রাচীনকাল থেকে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট এবং পলিফেনল থাকে, যা শরীরের বোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, ফলে ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ত্বকের উজ্জলতা বাড়ে এবং বয়সের ছাপ ধীরে পড়ে। এছাড়া, এটি হৃদযন্তের কার্যকর উন্নত করে এবং খারাপ কোলস্টেরল কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ত্নণে রাখে।
গ্রিন টি মানসিক স্বাস্থের জন্য ও উপকারী, কারণ এতে উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড মনকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুকে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি স্মৃৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং আলঝেইমার ও পারকিনসনের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্রিন দূর হয়। পাশাপাশি, এটি লিভারকে ডিটক্রিফাই করতে সাহায্য করে, ফলে লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
তবে অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করলে কিছু পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে ক্যাফেইন থাকায় বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ঘুমের সমস্যা, অনিদ্রা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। খালি পেটে পান করলে এটি গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি আয়রনের শোষণ ব্যাহত করতে পারে, ফলে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।ন যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য অতিরিক্ত গ্রিন টি ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এতে উপস্থিত ক্যাফেইন শিশুর বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করলে কিডনির কার্যকরিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, কারণ িএটি অতিরিক্ত মূত্র উৎপাদন করে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় মিনারেল বের করে দিতে পারে। এছাড়া রাতে বেশি গ্রিন টি পান করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে এটি হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে, ফলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই উপকারিতা পেলে ও পরিমাণ মতো এবং সঠিক সময়ে গ্রিন টি পান করাই ভালো।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
গ্রিন টি ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রাকৃতিক পানীয়, যা শরীরের মেটাবোলিজম বাড়িয়ে ফ্যাট বানিং প্রাক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এতে থাকা ক্যাটেচিন এবং অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট উপাদান শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তবে শুধু গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমবে না, বরং এটি সঠিক সময়ে ও নিয়ম অনুযায়ী গ্রহন করলেই কার্যকর হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ডায়েটের সঙ্গে গ্রিন টি যুক্ত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় হলো সকালে নাশতার পর, দুপুরের খাবারের এক ঘন্টা আগে বা পরে এবং সন্ধায় হালকা খাবারের পর। অনেকে মনে করেন, খালি পেটে গ্রিন টি পান করা ভালো, কিন্তু এটি অনেকের জন্য অ্যাসিডিটি বা পেটের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই খালি পেটে না খেয়ে হালকা খাবারের পর গ্রিন টি পান করাই উওম। রাতে ঘুমানোর আগে এটি পান করা উচিত নয়, কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
গ্রিন টি প্রস্তুতের সময় ফুটন্ত পানি ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে উপকারী উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হালকা গরম পানিতে দুই থেকে তিন মিনিট গ্রিন টি ভিজিয়ে রেখে পান করলে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়। কেউ চাইলে এতে মধুবা লেবুর রসের যোগ করতে পারেন। তবে চিনি মেশানো উচিত নয়, কারণ এটি ওজন কমানোর পরিবর্তিতে বাড়িয়ে দিতে পারে। গ্রিন টি অতিরিক্ত পান করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, যেমন উচ্চ ক্যাফেইনের কারণে অতিরিক্ত হৃদয় স্পন্দন, অনিদ্রা বা হজমের সমস্যা হতে পারে। দিনে দুই থেকে তিন কাপের বেশি গ্রিন টি পান না করাই ভালো। যারা গর্ভবতী, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য কোন দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গ্রিন টি পান করা উচিত। সঠিক নিয়মে গ্রহণ করলে এটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।
গ্রিন টি খাওয়ার সময়।
গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। অনেকেই মনে করেন যে গ্রিন টি যেকোনো সময় প্রান করা যায়, তবে এটি পুরোপুরি ঠিক নয়। সঠিক সময়ে গ্রিন টি পান করলে এটি শরীরের বিপাক হার বাড়িয়ে ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে খাবারের আগে বা পরে এটি পান করলে হজমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরে অ্যান্টিঅক্সাইডেন্ট মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, সকালের সময় গ্রিন টি পান করার জন্য অনেকেই উৎসাহী থাকেন, তবে খালি পেটে এটি পান করা উচিত না। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যদি একবারে খালি পেটে গ্রিন টি পান করা হয়, তাহলে এতে থাকা ক্যাটেচিন উপাদান পেটে আ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নাস্তা করার পর বা অন্তত হালকা কিছু খাওয়ার পর গ্রিন টি পান করা ভালো। এটি শরীরকে সতেজ রাখার পাশাপাশি মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে এবং সারা দিনের কাজের জন্য শক্তি যোগায়।
আরো পড়ুনঃ মুখের ব্রনের কালো দাগ দূর করার উপায়
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রাতে গ্রিন টি হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে, তাই ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এটি পান করার সময় নির্ধারণ করা ভালো৷ সঠিক সময় গ্রিন টি পান করলে এটি শরীরের জন্য কার্যকরী এবং স্বাস্থ্যকর ফলাফল আনতে পারে। রাতে গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী, কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যদি রাতের বেলায় এটি পান করতে হয়, তাহলে ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘন্টা আগে পান করা ভালো। কেউ যদি গ্রিন টি পান করার পর অস্বস্তি বা হজমের সমস্যা অনুভব করেন, তবে রাতে এটি না খাওয়াই উত্তম। সার্বিকভাবে, সঠিক সময়ে গ্রিন টি পান করলে এটি শরীরের জন্য বেশি উপকারী হতে পারে এবং সুস্থ জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
গ্রিন টি দাম কত
গ্রিন টি এর দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড, গুনমান, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং প্যাকেটের ওজনের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত স্থানীয় ব্যান্ডের গ্রিন টি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যের হয়, যেখানে আমদানি করা বা প্রিমিয়াম মানে গ্রিন টির দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। বাংলাদেশের বাজারে ইস্পাহানি, কাজে অ্যান্ড কাজে, লিপটন, তাজমহল সহ আরো অনেক ব্র্যান্ডের গ্রিন টি পাওয়া যায়, যা ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। প্রতিটি ব্র্যান্ড তাদের নিজস্ব স্বাদ এবং মানের উপর নির্ভর করে আলাদা দাম নির্ধারণ করে। সাধারণত, বাজারে ২৫ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন মাপের গ্রিন টি পাওয়া যায়। ইস্পাহানির ৩৫গ্রাম প্যাকেটের দাম প্রায় ১০১ টাকা, যেখানে ৭০ গ্রাম প্যাকেটের দাম প্রায় ১৫৫ টাকা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, কাজী অ্যান্ড কাজী ব্র্যান্ডের ৬০ গ্রাম গ্রিন টি ২১৪ টাকায় পাওয়া যায়। যদি ব্যাগ যুক্ত গ্রিন টি কিনতে চান, তাহলে ৫০ টি ব্যাগের একটি প্যাকেটের দাম প্রায় ২০০-২৫০ টাকা হতে পারে। এই ধরনের গ্রিন টি সহজেই সুপার শপ ও অনলাইন মার্কেটে পাওয়া যায়।
যারা প্রিমিয়াম বা আমদানি করা গ্রিন টি পছন্দ করেন, তাদের জন্য দামের পার্থক্য আরো বেশি হতে পারে। চায়না বা জাপানে গ্রিন টির দাম সাধারণত বেশি হয়, কারণ এসব চায়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নত এবং সাথে বিশেষত্ব থাকে। উদাহরণস্বরূপ, চাইনিজ গ্রিন টি ১০০ গ্রাম প্যাকেটের মূল্য প্রায় ১,৪৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, কিছু প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের গ্রিন টি, যেমন জাপানি ম্যাচা গ্রিন টি, ১,০০০-৩,০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। বড় পরিমানে গ্রীন টি কিনতে চাইলে দাম আরো সাশ্রয় হতে পারে।উদাহরণস্বরূপ, ৫০০ গ্রাম ওজনের গ্রিন টির প্যাকেট ৪৫০-৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, যেখানে ১ কেজি গ্রিনটির দাম ১,৫০০-২,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। সাধারণত পাইকারি দোকান বা অনলাইন স্টোর থেকে বড় পরিমাণে কিনলে ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করেন, তারা বড় প্যাকেট কিনলে দীর্ঘ মেয়াদে খরচ কমাতে পারেন।
গ্রিন টির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মান ও উৎস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় ব্যান্ডগুলোর তুলনায় আমদানি করা গ্রিন টি অধিক ব্যয়বহুল, তবে এগুলোতে স্বাদ ও মানের উন্নত পার্থক্য থাকতে পারে। অনেকে চায়ের স্বাদ ও উপকারিতার জন্য বেশি দামি গ্রিন টি পছন্দ করেন, আবার কেউ কেউ স্বল্পমূল্যের স্থানীয় ব্র্যান্ডের দিকে ও ঝুঁকেন। তাই গ্রিন টি কেনার সময় বাজেট, স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়টি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, গ্রিন টির দাম অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কি ধরনের গ্রিন টি কিনতে চান এবং কোথা থেকে কিনছেন। সুপারমার্কেট, অনলাইন স্টোর, কিংবা স্থানীয় দোকান থেকে কেনার সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও দামের তুলনা করে সেরা মানে গ্রিন টি কেনায় বুদ্ধিমানের কাজ। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী এবং পছন্দসই গ্রিন টি নির্বাচন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রীন টি কিভাবে বানাবো
গ্রিন টি তৈরির সঠিক পদ্ধতি জানা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ঠিক ভাবে বানানো না হলে স্বাদ তেতো হয়ে যেতে পারে এবং এতে থাকা উপকারী উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন, সাধারণ চায়ের মতই গ্রিন টি বানানো যায়, কিন্তু এর জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও তা উপভোগের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুত করাই হলো মূল চাবিকাঠি। তাই গ্রিন টি বানানোর সময় পানির তাপমাত্রা ও ভিজিয়ে রাখার সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। গ্রিন টি বানানোর সময় গ্রিন টি বানানোর জন্য প্রথমে বিশুদ্ধ পানি গরম করতে হবে, তবে এটি ফুটিয়ে তোলা উচিত নয়। পানির তাপমাত্রা ৭০-৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করলে গ্রিন টির স্বাদ তেতো হয়ে যেতে পারে এবং এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সাইডে ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই পানি হালকা ফুটে উঠলেই সেটি না নিয়ে কিছুক্ষণ ঠান্ডা হতে দেওয়া ভালো।
যদি টি ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, তাহলে এক কাপ গরম একটি পানিতে টি ব্যাগ ডুবিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় বেশি হয়ে গেলে গ্রিন টির অতিরিক্ত বা তেতো হয়ে যেতে পারে। যারা খোলা পাতার গ্রিন টি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য আধা চা চামচ গ্রিন টি পাতা এক কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২-৩ মিনিট পর ছেঁকে নিয়ে পরিবেশন করা যেতে পারে। অনেকে গ্রিন টির স্বাদ আরো উন্নত করতে এতে মধু, লেবু বা আদা মেশান। লেবুর রস যোগ করলে এটি সাধে আরো সুন্দর হয় এবং ভিটামিন সি যুক্ত হয়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মধু মেশালে প্রাকৃতিক মিষ্টত্ব পাওয়া যায়, তবে চিনি যোগ করা উচিত নয়, কারণ তা গ্রিন টির স্বাস্থ্য উপকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। কেউ চাইলে দার চিনি বা পুদিনা পাতা দিয়েও স্বাদ বাড়াতে পারেন।
গ্রিন টি বানানোর পরপরই তা পান করা উচিত, কারণ বেশি সময় রেখে দিলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং এতে থাকা উপকারী উপাদানগুলোর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া গ্রিন টি পান করলে অনেকের হজম সমস্যা হতে পারে, তাই এটি গরম বা হালকা গরম অবস্থায় পান করাই ভালো। যদি ঠান্ডা গ্রিন টি বানাতে চান, তবে গরম পানিতে গ্রিন টি তৈরি করে সেটি ঠান্ডা করে বরফ যোগ করে পরিবেশন করা যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন যে গ্রিন টি বেশি সময় ধরে ভিজিয়ে রাখলে এটি আরো উপকারী হয়, কিন্তু এটি ভুল ধারণা। বেশি সময় ভিজিয়ে রাখলে তে তো স্বাদ তৈরি হয় এবং এতে থাকা ক্যাফেইনের মাত্রা বেরে যেতে পারে, যা অনিদ্রা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সঠিক সময়ে টি ব্যাগ বা পাতা থেকে নেওয়া জরুরি।
যারা দিনে একাধিকবার গ্রিন টি পান করতে চান, তাদের জন্য দিনে ২ থেকে ৩ কাপ যথেষ্ট। খুব বেশি গ্রিন টি পান করলে শরীরে পানি শূন্যতা, ঘুমের সমস্যা বা হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমাণ মতো পান করাই উত্তম। সকালে নাস্তার পর, দুপুরের খাবারের আগে বা পরে এবং বিকালের নাস্তার সঙ্গে এক কাপ গ্রিন টি পান করা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। গ্রিন টি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যই নয়, বরং এটি মানসিক প্রশান্তি ও এনে দিতে পারে। এক কাপ সুগন্ধযুক্ত গ্রিন টি একদিকে যেমন শরীর সতেজ রাখে, তেমনি কাজের মাঝে স্বস্তি এনে দেয়। তাই সঠিক নিয়মে গ্রিন টি বানায়ে উপভোগ করা উচিত, যাতে স্বাদ ও গুণগত মান দুটোই বজায় থাকে।
গ্রিন টি তে বিশেষজ্ঞের মতামত
অনেকেই ক্যাফেইন যুক্ত পানিয় এড়াতে চন, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন যে গ্রিনটিতে থাকা প্রাকৃতিক ক্যাফেইন শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়, বরং এটি মস্তিষ্ককে সতেসে রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি পান করলে মানসিক সতর্কতা বাড়ে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এতে থাকা এল-থিয়ানিন নামক উপাদান মানসিক চাপ কমায় এবং আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। তাই যারা ঘনঘন ক্লান্তি অনুভব করেন বা দীর্ঘ সময় কাজ করেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং এটি অন্তরের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রীন টি তে থাকা উপাদানগুলো অন্তরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যা হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর এক কাপ গ্রিন টি পান করলে তা হজমে সহায়তা করতে পারে এবং ফলা ভাব কমাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ পায়খানার গন্ধ হয় কেন-পায়খানার গন্ধ ধূর করার উপায়
ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রেও গ্রিন টির বিশেষ উপকারিতা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সাইডেন্ড ও আন্টি ইনফ্লেটরি উপাদান ত্বকের তরুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং বলি রেখা বা বয়সের ছাপ কমাতে পারে। এছাড়া, এটি ব্রণ এবং অন্যান্য তদের সমস্যার বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তাই অনেক বিউটি প্রোডাক্টেও গ্রিন টির নির্যাস ব্যবহার করা হয়। তবে বিশ্বাস করা বলেন, অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করাও ভালো নয়। দিনে ২ থেকে ৩ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করলে এতে থাকা ক্যাফেইন কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রা, অ্যাসিডিটি বা নার্ভাসনেস সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত্ব, যারা আগে থেকে গ্যাস্ট্রিক বা অনিদ্রার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য গ্রিন টি গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখা জরুরী। এছাড়া, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গ্রিন টি পান না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত রয়েছে। খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে কিছু মানুষের জন্য এটি অস্বস্তিকর কারণ হতে পারে, তাই সকালে নাস্তার পর বা দুপুরের খাবারের পর এক কাপ গ্রিন টি পান করা উত্তম। রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে গ্রিন টি পান করলে এটি ঘুমের ব্যাঘাত করাতে পারে, তাই সন্ধ্যার পর গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। সব মিলিয়ে, বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রিন টি একটি উপকারী পানীয় হলেও সঠিকভাবে গ্রহণ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অংশ হিসেবে এটি খাদ্যভ্যাসে যুক্ত করলে তা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে অতিরিক্ত পান না করে এবং সঠিক নিয়ম মেনে গ্রহণ করাই ভালো স্বাস্থ্য উপভোগের চাবিকাঠি।
শেষ মন্তব্য
আমাদের এই আলোচনা থেকে পরিষ্কার, আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়া সত্যিই উপকারী। খালি পেটে এই চা পান করলে, শরীর আরো ভালোভাবে উপকার পায়। সুস্থ জীবনের জন্য এক কাপ গ্রিন টি অনেকের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাহলে আজই না হয়েছে এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে শুরু করুন। আপনার সুস্থতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবন গড়তে আদা-ও গ্রিন টির মিশ্রণ হোক আপনার নির্দেশ সঙ্গী।
dotbolgger
ডোট ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url